“অভিশপ্ত রাজপুরী" বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ সে আজ থেকে থেকে প্রায় শতাধিক বছর আগেকার কথা। ভারতবর্ষ ব্রিটিশের অধীন। জাতায়তাবাদী আন্দোলনের জোয়ারে আসমুদ্র হিমাচল উত্তাল। ভারতবর্ষে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ১৮৮৫ সাল হলেও ১৮৯৭ থেকে স্বাধীনতা লাভের আগে পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা লাভ বিনা রক্তপাতে হয়নি একথা সবাই জানেন। | ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রায় শেষ পর্বে বাংলা পাঞ্জাব মহারাষ্ট্র সহ প্রায় গােটা ভারতবর্ষের বুকে সে স্বাধীনতা অন্দোলনের জোয়ার ডেকেছিল তার মূলে ছিল কিন্তু বাংলা পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ। ব্রিটিশের তাঁবেদারি করে কত কত সামন্ত রাজা যে স্বাধীনতা লাভ কালবিলম্বিত করেছে তার একটি নমুনা এই কাহিনী। প্রতাপগড়ের খেতাবী রাজা বীরেন্দ্রপ্রতাপ, তার পিতা রুদ্রপ্রতাপ এবং তার পূর্বপুরুষরা কত নারীর ইজ্জত হরণ করেছে—স্বামীর অন্যায়ের প্রতিবাদে পরিণতি হিসাবে জুটেছে মৃত্যুদণ্ড, কত স্ত্রীর জীবন্ত কবর কিংবা গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি। কুঁয়াের মধ্যে সেই মৃতদেহের স্তুপ আজও তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। নিঝুম নিশুতি রাত্রে শােনা যায় ঝুমুরের নিক্কন, কিংবা করুণস্বরে কান্না কোন এক অতৃপ্ত অশরীরি আত্মার। গােটা বাংলাদেশে এরূপ একটি কাহিনী প্রচারিত। যে। ঘটনার অবতারণা করতে যাচ্ছি, ধরা যাক আজ থেকে মাত্র একশ বছরের আগেকার। ঘটনা। মৃন্ময় ও তন্ময় দু’জন ডিটেকটিভ এসেছে এই কান্না, নূপুরের শব্দ, গান, দৃশ্য মূর্তির রহস্য উদঘাটন করতে। ভাঙা পড়াে-ভিটে। বিশাল রাজপ্রাসাদ তা আজ ভেঙে চুরে স্থূপাকৃত। ঝােপ ঝাড়, বিষধর সাপ, বাদুড়, চামচিকে, পেঁচা আরও কত কীর নিরাপদ আশ্রয় স্থল। ভয়ে এ পথ দিয়ে কেউ যাতায়াত করে না। লােকে বলে ভূতপ্রেত পুরী। এটা একটা অভিশপ্ত রাজপুরী। | শােনা যায় এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এক মারাঠি ব্রাহ্মণ। দুর্ধর্ষ ঘােড়া ছুটিয়ে কয়েক হাজার সৈন্য সামন্ত নিয়ে এই বাংলার প্রতাপদীঘি নামে এক গণ্ড গ্রামকেই বেছে নিল তাদের নিশ্চিন্ত আবাসভূমি। এরা যেমন ছিল ধর্মভীরু দাতা—তেমনি নৃশংসও বটে। তাদের ভাষা ছিল মারাঠি। বাংলার শান্তিপ্রিয় মানুষজন তা বােঝে না।