ফ্ল্যাপে লিখা কথা কী হয়, কী হতে পারে যদি একদিন ভোরবেলা শহীদ আলতাফ মাহমুদ এসে হাজির হন এই বাংলাদেশে, এই ঢাকায়! যদি তাঁর দেখা হয়ে যায় শিমূল ইউসুফের সঙ্গে? যদি তারা উম্মোচন করতে থাকেন ইতিহাসের যবনিকা। যদি উঠে আসে সেই ৪০.৫০.৬০-এর দশকের আগুনতাতানো দিনগুলো! আমার ভয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফ্রেব্রুয়ারী গানের অবিস্মরণীয় সুরকার গণমানুষের শিল্পী আলতাফ মাহমুদ একাত্তরের যোদ্ধা আর শহীদ। আজকের দিনে ফিরে এলে তিনি কী তার প্রত্যাশার বাংলাদেশকে খুঁজে পাবেন? আনিসুল হকের মমতভরা কলমে আরো একবার উঠে এলা স্বদেশ, মুক্তিযুদ্ধ আর আমাদের সান্ধ্য বর্তমান!
ভূমিকা এই আখ্যানের একটি চরিত্র শহীদ আলতাফ মাহমুদ, আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী গানের সুরকার, মহান শিল্পী ও যোদ্ধা। আরেকটা চরিত্র শিমূল ইউসুফ, আমাদের দেশের অগ্রগণ্য নাট্যজন। শিমূল ইউসূফের একটা অসাধারণ লেখা আছে এই বিষয়ে, একজন সাহসী মানুষের মুখ শিরোনামে, প্রকাশিত হয়েছে মতিউর রহমান সম্পাদিত ‘আলতাফ মাহমুদ : এক ঝড়ের পাখি’ গ্রন্থে। শিমূল ইউসুফ অনেক ভালো লেখেন। এই আখ্যানের সংলাপগুলো তাঁর পছন্দ হবে কি হবে না, এই বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ আছে। আবার তাঁর মুখ দিয়ে প্রকাশিত আমার পরিবেশিত মত বা মন্তব্য বা তথ্যের সঙ্গে তিনি একমত নাও হতে পারেন। মনে রাখতে হবে, শিল্পী হিসেবে আমি পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়েই চরিত্রটি রচনা করেছি। কাজেই এই বইয়ের সমস্ত বাক্যের দায়দায়িত্ব আমার। তবে ঐতিহাসিক ঘটনা পরিবেশনের সময়ে সত্যনুগ থাকার চেষ্টা করেছি শতভাগ। এর আগে মা গ্রন্থ রচনার সময়ও শিমূল ইউসুফ ও নাসির উদ্দীন ইউসূফ বাচ্চুর যে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি, তা থেকে বলতে পারি, আমার ভুলক্রটিও তাঁরা ভালোবাসার সঙ্গেই প্রশ্রয় দেবেন। তাঁদেরকে ভালোবাসা।
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।