"স্তালিন" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ পৃথিবীর নানা ভাষায় স্তালিনের জীবনী লেখা হয়েছে। সেই সব জীবনীতে অনেক ঘটনাবলিরই উল্লেখ নেই। কিন্তু হিন্দিতে স্তালিনের জীবনী লেখা হয়নি বললেই চলে। এমনিতে স্তালিনের ঐতিহাসিক জীবনী লেখা হয়নি, তাছাড়া ভবিষ্যৎ পৃথিবীর পথপ্রদর্শকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানাে আমার এক উদ্দেশ্য। সেজন্যে আমি কলম তুলে নিয়েছি। আমি জানি, এ-জীবনীতেও ত্রুটি থেকে যাবে, যে ত্রুটি আমার ভাষায় লিখিত জীবনীতে সচরাচর দেখা যায়। তা হচ্ছে-ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনা-সংগ্রহের স্বল্পতার জন্যে। আমি তার ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য-সংগ্রহের চেষ্টা করছি ও কিন্তু সে তথ্য সংগ্রহের জন্যে অনিশ্চিত কাল বসে থাকা এবং এই গ্রন্থ প্রকাশে বিলম্ব ঘটুক তা আমি ঠিক মনে করিনি। আশা করছি, দ্বিতীয় সংস্করণে সে-সব তথ্য সংযােজিত করে পাঠকদের সমীপে উপস্থিত করতে পারব। স্তালিনের জীবনী শুধুমাত্র জ্ঞান বিকাশের একটা হাতিয়ারই নয় বরং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তা আলাের বর্তিকা স্বরূপও। স্তালিনের জীবনী লেখার সময় আমার মনে হয়েছিল, হিন্দী ভাষাভাষী পাঠকদের জন্যে বিশ্বের মহান নির্মাণকর্তার যে জীবনী উপস্থিত করছি সেটি তাঁদের কাজে লাগবে।
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।