অধুনা উত্তরপ্রদেশ ও উত্তর বিহারের অধিকাংশ অঞ্চল জৌনপুরের অন্তর্গত ছিল। মুহম্মদ তুঘলকেরই অন্য নাম জৌনাশাহ, তাঁর নামেই জৌনপুর শহরের প্রতিষ্ঠ্য। পূর্বে গােমতীর তীরে সেখানে হয়তাে কোনাে শহর ছিল, তবে তা আমাদের জানা নেই। জৌনপুর মুসলমান বাদশাহের রাজধানী। কিন্তু সেই বাদশাহী ব্যবস্থা এমন যে তাতে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই অন্তর্ভুক্ত ছিল। দরবারে হিন্দুরা সমান মর্যাদা লাভ করত। দিল্লীতে হিন্দুরা সেই মর্যাদা পায় দেড়শাে বছর পরে, আকবরের আমলে, যখন তিনি নিজের হাতে শাসন-ক্ষমতার বল্লা তুলে নেন। তবে বল্লা হাতে নিয়েই দিল্লী ত্যাগ করে সিক্রী ও আগ্রায় নিজের রাজধানী স্থানান্তরিত করেন তিনি। পঞ্চদশ শতাব্দী জৌনপুরের আধিপত্যের শতাব্দী। যে-মাটিতে জৌনপুরের অবস্থান, সে-মাটিকে ভুলতে দেয়নি জৌনপুর, যে-সংস্কৃতিতে বিশ্বাস নেয় মানুষ, সেসংস্কৃতিকেও ভুলতে দেয়নি। জৌনপুর ভারতীয় সঙ্গীতের পৃষ্ঠপােষকতা করেছে, অওধী ভাষা ও সাহিত্যিরও সমাদর করেছে, তার প্রমাণ আওধীর প্রথম শ্রেষ্ঠ করি মঞন, কুতুবন, জায়সী জৌনপুরের দরবার অলঙ্কৃত করেছিলেন। সকলেই মুসলমান ছিলেন। কিন্তু তারা দেশের ভাষা, কাব্যশৈলী আত্মস্থ করেছিলেন। জৌনপুর হিন্দুমুসলিম ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। মুসলমানেরা নিজেদের অহংকার কিছুটা বিসর্জন দিয়েছিল, হিন্দুরা নিজেদের হারানাে আত্মসম্মান পুনর্লাভ করেছিল একপক্ষ এক ধাপ নিচে নেমেছিল, অন্য পক্ষ এক ধাপ উপরে উঠেছিল। উভয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল।
তাঁর জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে সনাতন হিন্দু ভূমিহার ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মস্থান উত্তর প্রদেশের আজমগড়ের একটি ছোট্ট গ্রাম। তাঁর আসল নাম ছিল কেদারনাথ পাণ্ডে। ছোটোবেলাতেই তিনি মাকে হারান। তাঁর পিতা গোবর্ধন পান্ডে ছিলেন একজন কৃষক। বাল্য কালে তিনি একটি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনে একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অষ্টম শ্রেণী অবধি অধ্যয়ন করেছিলেন। এখানে তিনি উর্দু ও সংস্কৃতের উপর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বহু ভাষায় শিক্ষা করেছিলেন যথা : হিন্দি, উর্দু, বাংলা, পালি, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি, তিব্বতি ও রুশ।
পুরস্কার তালিকা পদ্মভূষণ (১৯৬৩) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৮)
ব্যক্তিগত জীবন জালিওয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকান্ড (১৯১৯) তাঁকে একজন শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী কর্মীতে রূপান্তরিত করে। এ সময় ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাকে আটক করা হয় এবং তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এ সময়টিতে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ সংস্কৃতে অনুবাদ করেন। পালি ও সিংহল ভাষা শিখে তিনি মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলো পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা আকৃষ্ট হন এবং নিজ নাম পরিবর্তন করে রাখেন রাহুল (বুদ্ধের পুত্রের নামানুসারে) সাংকৃত্যায়ন (আত্তীকরণ করে যে)।, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিহারে চলে যান এবং ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ-এর সাথে কাজ করা শুরু করেন। তিনি গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং এসময় তিনি গান্ধীজী প্রণীত কর্মসূচীতে যোগদান করেন। যদিও তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলো না, তবুও তার অসাধারণ পান্ডিত্যের জন্য রাশিয়ায় থাকাকালীন লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে শিক্ষকতার অনুরোধ করা হয়। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। ভারতে এসে তিনি ডঃ কমলা নামক একজন ভারতীয় নেপালি মহিলা কে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান হয়, কন্যা জয়া ও পুত্র জিৎ। পরে শ্রীলংকায় (তৎকালীন সিংহল) বিদ্যালঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দার্জিলিংয়ে, ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।