ভূমিকা বাংলা ভ্রমণসাহিত্য গুণে হিমালয়তুল্য হয়েও পরিমাণে বিন্ধ্যপর্বতও নয়, বড়জোর মাঠাবুরু কি মেঘাতাবুরু। কিংবা গুণে যদি গঙ্গা, তো পরিমাণে— গোদাবরী? মনে হয় না, খুব বেশি হলে বাঁকুড়ার কংসাবতী বা, ঝাড়গ্রামের ডুলুং বললেই ঠিক হয়। এ যেন সমুদ্রপরিমাণ খিদে মেটাতে এক মুঠো খুদের জোগান ৷ ভ্রমণগ্রন্থের সংখ্যা অঙ্গুলিমেয় হবার একটা কারণ নাকি এর কম ক্রেতা। ‘ভ্ৰমণ’ পত্রিকার সূচনায় দেখেছি গরিষ্ঠ পাঠকশ্রেণী চান ভ্রমণ-গাইড, ভ্রমণকাহিনীতে তাঁদের আগ্রহ কম। এই মর্মান্তিক আবিষ্কারে এক সময় 'ভ্রমণ' প্রকাশ বন্ধ করার কথাও ভেবেছি। তারপর ভ্রমণ-গাইডের পাশাপাশি নিয়মিত দুয়েকটি ভ্রমণকাহিনী পরিবেশন করে শেষ পর্যন্ত শারদীয় সংখ্যায় শুধুই ভ্রমণকাহিনী ক্রমশ অধিক পাঠককে আকর্ষণ করছে দেখে আমরা আহ্লাদিত। তবে, ভ্রমণসাহিত্যে আমাদের যদি কিছুমাত্র অবদান কোথাও থাকে তা হয়তো ভ্রমণকথারচনার গঙ্গাকে মহাদেবের জটা থেকে মর্তে নিয়ে আসায়। এভাবেই ‘ভ্রমণ' পত্রিকা বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের জয়যাত্রায় হয়তো অজান্তেই সামিল হয়ে গেছে। দশ বছরের ‘ভ্রমণ’ থেকে নির্বাচিত একশোরও বেশি ভ্রমণকাহিনী নিয়ে এই বৃহৎ ভ্রমণকথাসংকলন। সম্ভবত, বাংলা ভাষায় সর্ববৃহৎ ভ্রমণকথামৃত। একথাও নিশ্চিত করে বলা যায় যে কোনও একটা বইয়ে ভূ-ভারতের এত বেশি স্থানের ভ্রমণকাহিনী এর আগে আর সংকলিত হয়নি। সেদিক থেকে আমাদের এই বইকে ভ্রমণের মহাভারত বলা যায়, হয়তো।