ভারতীয় দর্শন কি ও কেন ? প্রথমেই প্রশ্ন জাগে দর্শন শব্দের অর্থ কি? ‘দৃশিঃ প্রেক্ষণে' এই প্রেক্ষণার্থক দৃশ ধাতুর উত্তর করণবাচ্যে ল্যুট্ প্রত্যয়ের যোগে দর্শন শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে, যার অর্থ প্রেক্ষণ বা দেখা। এখন, বেদান্ত প্রভৃতি শাস্ত্রকে আমরা দর্শন বলি কেন? দেখা তো চোখের ব্যাপার। শাস্ত্র তো শব্দাত্মক। শব্দের দ্বারা কি চাক্ষুষ জ্ঞান হয়? এর উত্তরে পণ্ডিতেরা বলেন—দর্শন শব্দের অর্থ সাক্ষাৎকার। দর্শনশাস্ত্রের প্রতিপাদ্য তত্ত্বগুলির সাক্ষাৎকারই হল দর্শন। তাই বলা হয়—শাস্ত্রৈঃ পশ্যন্তি পণ্ডিতাঃ'। যাদের দ্বারা তত্ত্বগুলি উপলব্ধি করা হয় তারা হল দর্শন।’‘দৃশ্যতে সাক্ষাৎ ক্রিয়তে তত্ত্বম্ এভিরিতি দর্শনানি।' প্রাচীনগণ আরো বলেন— যদাভ্যুদয়িকং চৈবং নৈঃশ্রেয়সিকমেব চ। সুখং সাধয়িতুং মার্গং দৰ্শয়েৎ তহি দৰ্শনম্।। যে শাস্ত্র অভ্যুদয়গত সুখ ও নিঃশেয়স লভ্য সুখ এই উভয় সুখের পথপ্রদর্শন করে তাই হল দর্শন।
ভারতীয়দর্শনের বৈশিষ্ট্য হল এই এখানে দার্শনিকগণ পরমতকেও সমান নিষ্ঠার সঙ্গে উপস্থাপিত করেছেন। সব আস্তিক দর্শনে নাস্তিক মতগুলি সযত্নে প্রকাশিত হয়েছে। তারপর সেগুলি খণ্ডিত হয়েছে। তাই আস্তিক দর্শনের গ্রন্থে নাস্তিকদর্শনের বক্তব্য পাওয়া যায় বিস্তারিতভাবে এবং কেন সেগুলি গ্রাহ্য নয় তাও জানানো হয়েছে বলিষ্ঠ যুক্তির ভিত্তিতে। আবার নাস্তিক দর্শনগুলিতেও (চার্বাক, বৌদ্ধ ও জৈন) আস্তিক দর্শনের নানা তত্ব বিশ্লেষণ করে খণ্ডন করা হয়েছে। ভারতীয় দর্শনের নয়টি শাখার মূল গ্রন্থগুলি পরবর্তীকালে নানা ভাষ্য টীকা টিপ্পনীর দ্বারা ব্যাখ্যাত হয়েছে। এভাবে সংস্কৃত ভাষায় রচিত ভারতীয় দর্শনের শাখাগুলি বিপুল যুক্তিতর্ক-ভাবনার প্রকাশে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।