সাহিত্য আর চলচ্চিত্র-সর্বক্ষেত্রেই আমজাদ হোসেন প্রথম কাতারের এক শিল্পী। নাট্যকার, অভিনেতা আর পরিচালক হিসেবে নাটকে ও চলচ্চিত্রে তাঁর বিশাল খ্যাতির পাশেই যশস্বী হয়েছেন তিনি গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে। বিশেষত ছোটগল্পে তিনি নিজস্ব একটি পৃথিবী নির্মাণ করেছেন। বাংলাদেশের ষাটের দশকে তাঁর উত্থান এবং তিনি শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি সাহিত্যেও অভিশ্রাম সাবলীল সক্রিয়। আমজাদ হোসেন বিশিষ্ট ফসল ফলিয়েছেন তাঁর ছোট গল্পে। তাঁর সমগ্র শিল্পকর্মে সাধারণ মানুষই উঠে এসেছে বারবার। কিন্তু কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নয়। স্বাভাবিক জীবনচিত্র হিসেবেই এসেছে। স্থির চিত্র, কাল সকালে, জেঠিমা, বিধু এবং ঈশ্বরী ইত্যাদি গল্পগুলোই তার যথেষ্ট প্রমাণ বহন করছে। দেশ বিভাগ, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ঘটনাকেও তার কলম স্পর্শ করেছে। দ্বিখণ্ডিতা, একটি রাজনৈতিক চড়, ফুলের গন্ধে ফেব্রুয়ারি, কারবালার পানি-এই সমস্ত গল্প তার বিশ্বস্ত দলিল। আঞ্চলিকতার একটি আস্বাদ আমজাদ হোসেনের গল্পগুচ্ছকে নিজস্ব বৈশিষ্টে উজ্জ্বল করেছে। সব মিলিয়ে বাংলা ছোটগল্পে একটি নিজস্ব চিহ্নিত আয়তন যোগ করেছেন তিনি। আমজাদ হোসেনের ‘নির্বাচিত গল্প’ বাংলা ছোটগল্পের আবহমান ধারায় যুক্ত করল একটি নতুন শাখানদী। সূচিপত্র *স্থিরচিত্র *চর গিরীশের বিষণ্নতা *ফুলের গন্ধে ফেব্রুয়ারি *কারবালার পানি *দ্বিখণ্ডিতা *একটি রাজনৈতিক চড় *এপার ওপার *মাঠের মেয়ে *জলমানুষ *কোনো এক চৈত্রের নিঝুম দুপুরে *রহিমুদ্দীর দ্বিধাদ্বন্দ্ব গেল না *পুষ্পকীট *দুঃখ দাগ *আগুন সময় *পরীনামায় জোছনায় বৃষ্টি *একুশের গল্প *ফটোগ্রাফার *মাটির টান *বাবার ছবি *বারান্দা *জেঠীমা *গৈ গেরামের কচুরী পানা *রাধা *কাল সকালে *বিধু ও ঈশ্বরী *একাত্তরের সেই মেয়েটি *শীতের বৃষ্টিতে *যুদ্ধে যাবার আগে *যুদ্ধ *বৃষ্টিতে সুরঞ্জনা *আমি তোমাদের বিন্দু *স্বাক্ষী আকুল নদী *জামদানী জমি *আনন্দী *যুদ্ধের রূপকথা
আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালে জামাল পুর টাউনে। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মাতা খোদেজা খাতুন। ছাতিয়ানতলা প্রাইমারী স্কুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ শুরু। যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন। যশোর মাইকেল মধুসুদন কলেজ (সরকারী) থেকে আইএ ও বাংলা অনার্সে উত্তীর্ণ হন। তিনি অনার্স পরীক্ষা দেন যশোর সেন্ট্রাল জেল ও রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে থাকা অবস্থায়। কলেজে পড়াকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালের শুরুতে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে। প্রথমবার তিনি জেলে যান পাকিস্তান রক্ষা আইনে গ্রেফতার হয়ে ১৯৬৭ সালে। প্রায় ৮ মাস যশোর ও রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে থাকেন। দ্বিতীয়বার তাঁকে জেলে থাকতে হয় কিছু সময়। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) এর সম্পাদক ছিলেন। ৮০ দশকের মধ্যভাগ থেকে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন এবং লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের রাজনৈতিক অর্থনীতি, বাঙালীর ঐতিহ্য বাঙালীর ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস (২ খÐ), বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, রাজনীতির পাঠ, নকশালবাড়ীর কৃষক আন্দোলন, বর্তমান রাজনীতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি, ত্রিবিশ্বতত্ত্ব ও অন্যান্য প্রবন্ধ, আলবেনিয়া কোন পথে, পাট সমস্যা, কৃষক সমিতি কাহাকে বলে, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সমস্যা, মৌলবাদ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, দাবী বদলে যায়নি (৫ খণ্ড), সমাজ ও ধর্ম, মওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতি, সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন ও রাজনীতি, মানবেন্দ্রনাথ জীবন ও রাজনীতি, মৌলবাদ ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি, মহাপণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের জীবনী, উপন্যাস সমগ্র (২ খণ্ড), ভাগ্যবতী ও অন্যান্য নাটক, সূর্য শপথ, ফেরা, রহিমা, চকলেট ও অন্যান্য গল্প, দশটি ছোট গল্প, ব্যঙ্গ নাটক, নন্দিনী, ভিতুর ডিম, তিনটি প্রবন্ধ ইত্যাদি।