"রবিন হুড"বইটির ভূমিকা: রবিন হুড বলে সত্যিই কি কেউ ছিল? অনেক তর্ক-বিতর্কের পর পণ্ডিতেরা সিদ্ধান্তে পৌছেছেন, যদিও জন্ম-বৃত্তান্ত কিছুই পাওয়া যায় না, খ্রীষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে রবিন হুড বলে যে সত্যিই কেউ একজন ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সত্যিই সে অত্যাচারী নর্মান শাসক আর অর্থলােলুপ ধর্মযাজকদের অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে দস্যু হয়েছিল, খ্যাতি অর্জন করেছিল গরীব-দুখীর বন্ধু আর অত্যাচারীর যম হিসাবে। সেকালে অসংখ্য গান রচিত হয়েছিল তার বীরত্ব ও মহত্ত্বের আশ্চর্য সব কীর্তি-কাহিনী নিয়ে। লােকের মুখে-মুখে ফিরেছে সে-গান কয়েক শতাব্দী ধরে। সেই শেরউড জঙ্গল আজও আছে ইংল্যান্ডের নটিংহামশায়ারে-যদিও লােকালয়ের সম্প্রসারণে অনেক ছােট হয়ে গেছে তার আকার। আজও আছে সেখানে ‘ব্লু বাের সরাইখানা'-যদিও আমার বিশ্বাস, এটা আধুনিক কোন ব্যবসায়ীর উদ্যমের ফসল, সেই আদি ব্লু বাের নয়। রবিন হুডের কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি, কিন্তু তার বিশ্বস্ত অনুচর লিটল জনের কবর পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে ইংল্যাণ্ড, স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যাণ্ড। এর মধ্যে ডার্বিশায়ারের হেদারসেজ গ্রামে যে কবরটি পাওয়া যায়, তাতে অস্বাভাবিক লম্বা মানুষের অস্থি আবিস্কৃত হয়েছে। এসব থেকে অনুমান করা যায়, লিটল জন বলেও সত্যিই ছিল কেউ। কিন্তু তাই বলে এ-বইয়ের প্রতিটি ঘটনাকে ঐতিহাসিক সত্য মনে করবার কোন যুক্তি নেই। লােকের মুখে মুখে ঘুরলে গল্পের যা হয়নিজ নিজ কল্পনার রঙ চড়াতে কসুর করে না কেউ-রবিন হুডের বেলাতেও ঠিক তাই হয়েছে। অনেক ঘটনার উল্লেখ আছে এতে-কোন্টা সত্যি, কোটা অতিরঞ্জিত, আর কোটা যে সর্বৈব কাল্পনিক, জানার উপায় নেই আমাদের। | জেনে লাভই বা কি, বলুন? তারচেয়ে আসুন, বাস্তব জটিল জীবনের কর্মব্যস্ততার কোনও অবসরে অদ্ভুত এক স্বপ্নের জগতে কিছুক্ষণের জন্য বিভাের হয়ে হারিয়ে যাই।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রহস্য-রোমাঞ্চ গল্পের সাহিত্যধারাকে প্রায় একা হাতে জনপ্রিয় করে তুলেছেন যে মানুষটি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে এই সাহিত্যধারার বিশাল পাঠকশ্রেণী। বিদ্যুৎ মিত্র এবং শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে লিখেছেন অসংখ্য গল্প। পাঠকদের কাছে পরিচিত প্রিয় কাজীদা নামে। প্রখ্যাত গণিতবিদ ও সাহিত্যিক বাবা কাজী মোতাহের হোসেন ও মা সাজেদা খাতুনের ঘরে ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন কাজী শামসুদ্দিন নওয়াব। পরিবারের সঙ্গীতচর্চার ধারাবাহিকতায় প্রথমে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬৩ সালে বাবার দেওয়া টাকায় সেগুনবাগিচায় প্রেসের যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে সেই প্রেস থেকেই নিজের সম্পাদনায় পেপারব্যাকে সৃষ্টি করেছেন কুয়াশা, মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দার মতো চিরতরুণ চরিত্রগুলোর। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই ‘কুয়াশা’ সিরিজের মাধ্যমেই মূলত রহস্যধারার বই প্রকাশ শুরু সেবা প্রকাশনীর। এরপর এক বন্ধুর প্রকাশিত জেমস বন্ডের ‘ডক্টর নো’ পড়ে ঠিক করেন বাংলাতেই লিখবেন এই মানের থ্রিলার। সালটা ১৯৬৫, মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে এলেন চট্টগ্রাম, কাপ্তাই ও রাঙামাটি। সাত মাস সময় নিয়ে লিখলেন মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম গল্প ‘ধ্বংস পাহাড়’। এই সিরিজের কাজী আনোয়ার হোসেনের বই সমূহ এর মধ্যে প্রথম তিনটি বাদ দিলে বাকিসবগুলোই লেখা হয়েছে বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। কাজী আনোয়ার হোসেন এর বই সমগ্র রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের যে পিপাসা পাঠকের মনে তৈরি করেছে তা মেটাতে সাড়ে চারশোরও বেশি মাসুদ রানার বই প্রকাশ করতে হয়ছে সেবা প্রকাশনীকে, যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।