রবীন্দ্রনাথ ‘স্বদেশী সমাজ' প্রবন্ধটি মিনার্ভা থিয়েটার ঘরে পাঠ করার পরে মুগ্ধ গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মূল সমস্যা সম্বন্ধে বলেছিলেন, “ইনি কবি। বৈজ্ঞানিক যেরূপ ভাবে আমাদের অভাব-অভিযোগের কথা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কথা বলিয়া উপায়গুলির ক্ষুদ্রতম বিশ্লেষণে প্রবৃত্ত হইতেন, রবীন্দ্রনাথ তাহা না করিয়া তাঁহার অপূর্ব প্রতিভার সংকেতে যেন একটি চিত্র আঁকিয়া দেখাইয়াছেন।” রবীন্দ্রনাথের সেই বক্তৃতাসভায় উপস্থিত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন, “গত ৪০/৫০ বৎসর যাবৎ লোকের মনে যে-সকল কথা আভাসে উদয় হইয়াছে রবীন্দ্রবাবু তাহাই অপূর্ব ভাষার পরিচ্ছদ পরাইয়া বাহিরে আনিয়াছেন।” সেই সভার সভাপতি রমেশচন্দ্র দত্ত বলেছিলেন, “রবীন্দ্রবাবুর প্রবন্ধের ন্যায় উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ তিনি কখনো শুনিয়াছেন বলিয়া তাঁহার স্মরণ নাই।” এই সব প্রশংসাবাণী শুনে রবীন্দ্রনাথ আপ্লুত না হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, “আমি বাল্যকাল হইতে কাব্যসাহিত্য-দ্বারা আপনাদের হৃদয়বন্ধন করিতে চেষ্টা পাইয়াছি। কিন্তু অদ্যকার উদ্দেশ্য শুধু হৃদয়রঞ্জন নহে। যে লোকের ব্যবসা বাঁশি বাজানো, সহসা সর্পাঘাতের উপক্রম হইলে সে বাঁশিকে লাঠির মতো ব্যবহার করিয়া থাকে।” রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধটি দ্বিতীয়বার পাঠ করেন কার্জন রঙ্গমঞ্চে, মিনার্ভা থিয়েটারে বহু শ্রোতা স্থানাভাবে ফিরে যাওয়ায়। কিন্তু এই দুই সভায় আলোচনা শুনে রবীন্দ্রনাথ কার্জনের সভায় বলেন, “প্রবন্ধপাঠের শেষে এমন কথা যখন উঠিল তখন বুঝিলাম— আমার সমস্ত প্রবন্ধই ব্যর্থ হইয়াছে।” ব্যর্থ যে হয়নি, তার প্রমাণ, ‘স্বদেশী সমাজ' প্রবন্ধকে ঘিরে পত্রপত্রিকায় আলোচনার ঢেউ, যাতে অংশ নিয়েছিলেন সেই সময়কার তীক্ষ্ণধী পৃথ্বীশচন্দ্র রায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মতো লেখকেরা। রাজনীতি হোক, সমাজনীতি হোক,