ঠাকুর পরিবারের সাংগীতিক পরিবেশ রবীন্দ্রনাথের বাল্যজীবনে সংগীতের প্রভাব যে কোন মহৎ সৃষ্টির পিছনে পরিবেশের প্রভাব থাকেই। রবীন্দ্রনাথের সংগীত- প্রতিভার উন্মেষের মূলেও ছিল ঠাকুর পরিবারের সাংগীতিক পরিবেশের প্রত্যক্ষ প্রভাব। বাংলাদেশে যখন আধুনিক যুগের সবেমাত্র শুরু, তখন রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। অভিজাত পরিবারগুলিতে তখন উচ্চাঙ্গ সংগীতের যথেষ্ট সমাদর ছিল। ঠাকুর পরিবারও এ ব্যাপারে ব্যতিক্রম ছিল না; বরং উচ্চাঙ্গ সংগীতের চর্চায় ঠাকুর পরিবার তখন অগ্রণীর ভূমিকাই নিয়েছিল। পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় সংগীত শেখাবার জন্যে একজন গৃহশিক্ষক সবসময়ই নিযুক্ত থাকতেন। এঁদের মধ্যে বিষ্ণু চক্রবর্তীর নাম উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথ বাল্যকালে এঁর কাছেই প্রথম গান শেখেন। এই বিষ্ণু চক্রবর্তী প্রচলিত পাড়াগেঁয়ে ছড়ায় হাল্কা সুর বসিয়ে সহজ ছন্দের গান শেখাতেন বাড়ির ছেলেমেয়েদের। এছাড়া ছিলেন যদুভট্ট, শ্রীকন্ঠ সিংহ, রাধিকা গোস্বামী, শ্যামসুন্দর মিশ্র ও রামপ্রসাদ মিশ্র (সেতার শিক্ষ ১)। রবীন্দ্রনাথের দাদাদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ, হেমেন্দ্ৰনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও সোমেন্দ্রনাথ উচ্চাঙ্গ সংগীতে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এঁরা সকলেই হিন্দিগান ভেঙে বাংলায় ব্রহ্মসংগীত রচনা করেন। বাড়ির ব্রহ্ম-উপাসনায় গাইবার উদ্দেশ্যেই এ গানগুলির অধিকাংশ রচিত হয়েছিল। এছাড়া ‘হিন্দুমেলা'-র যুগে সত্যেন্দ্রনাথের রচিত ‘মিলে সবে ভারত সন্তান’- গানটি যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ বাঁশি ও অর্গান বাজনায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ভগ্নীপতি সারদা-প্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় সেতার বাজাতেন। তাঁর আয়োজিত সংগীতাসরেও বহু বড়ো বড়ো গায়ক-বাদকের সমাবেশ ঘটতো।