"পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনকে জানার আগ্রহ শুধুমাত্র এদেশের মানুষের কাছে নয় বিদেশিদের কাছেও সমভাবে বিদ্যমান। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে দ্বীপভূমি সুন্দরবনের প্রায় অর্ধাংশের অরণ্য কেটে গড়ে উঠেছিল লোকবসতি। বাকি অর্ধাংশ এখনও অসীম রহস্যে ভরা গভীর অরণ্যভূমি। নদীনালা ঘেরা সাপ আর হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণভূমিতে যথেচ্ছ প্রবেশ কখনই সম্ভব নয়। তাই তার রহস্য চিরকাল মানুষকে আকর্ষণ করেছে। অপর দিকে অরণ্য কেটে গড়ে ওঠা নদীঘেরা দ্বীপভূমিতে বাস করে বহু মানুষ। তাদের অনেকে অরণ্যে মধু কাটে, মাছ-কাঁকড়া ধরে, কাঠ সংগ্রহ করে। তারা মৌলে, জেলে, কাঠুরে। নৌকা ভাসিয়ে গান গাইতে গাইতে তারা অরণ্যভূমির দিকে পাড়ি দেয় । সে গান সুন্দরবনের মাঝিদের নিজস্ব গান। তাদের দেবতা বনবিবি, দক্ষিণ রায়, বড়খাঁ গাজী। ধর্ম নির্বিশেষে দেবতার থানে তারা সিন্নি চড়ায়, তারপর বাপ ঠাকুরদাদার শেখানো মন্ত্রে বাঘের মুখে খিলান দিয়ে নির্ভয়ে দক্ষিণ রায়ের রাজত্বে প্রবেশ করে। আছে আরও অসংখ্য মানুষ। অধিকাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল। বুকে ভয় কখন আসবে ঝড়, বাঁধ ভেঙে সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। লোনা জলে শষ্যক্ষেত্র হবে টইটম্বুর। দ্বীপভূমির শিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের চোখে স্বপ্ন, মনে ভালোবাসা। কিন্তু তাদেরও জীবন যেন বড় অনিশ্চয়তায় ভরা। এদের সকলের কথা স্বল্প পরিসরে উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল সুন্দরবনের লোকবসতি? অতীতের সেই ইতিহাস থেকে নিকট অতীতের মরিচঝাঁপি, নকশাল আন্দোলন ইত্যাদি ঘটনা সুন্দরবনের ভূমিপুত্র কথাশিল্পী নিখিল মণ্ডলের নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখিত হওয়ায় তা হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত ।"