বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ-ষাটের দশকের অন্যতম কথাসাহিত্যিক বিমল কর। স্বাধীনতা উত্তর কালে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র এবং বিশিষ্ট একটি ধারার সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন তরুণদের উৎসাহ দাতা, পথপ্রদর্শক। কিন্তু তাঁর আপন সৃষ্টির ভুবনটি একান্ত নির্জন ৷ সাহিত্য সৃষ্টি প্রসঙ্গে বহুকাল আগে তিনি বলেছিলেন, তাঁর অধিকাংশ গল্প উপন্যাসই ‘নিজের' জন্য লেখা এবং দশ বছর পর তাঁর লেখা বেশি কেউ পড়বে এমন প্রত্যাশা তিনি রাখেন না। প্রত্যাশা তিনি না রাখলেও তা যে বহুগুণে পূর্ণ হয়েছে সে তো বলা বাহুল্য । আর তা হতে পেরেছে কারণ বিমল করের ‘নিজের' কথা আরও অনেক মানুষের নিজের হয়ে উঠেছে। এই ‘নিজত্বে’র তো স্বতন্ত্র রূপ থাকে না, তা রূপায়িত হয়ে ওঠে সম্পর্কের আধারে। এই সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে তাঁর সহ মানুষদের, এমনকি যাঁরা অতীতে ছিলেন, স্মৃতির পথ ধরে তাঁদের সঙ্গেও এবং বৃহত্তর অর্থে জীবনের সঙ্গে। বিমল কর মানুষের এই স্তরান্বিত চৈতন্যের রূপদানে দক্ষ শিল্পী। পারস্পরিক সম্পর্কের ঘন বুনোট জালে ধরা পড়ে তার অন্তর্গত, প্রচ্ছন্ন সত্তা পরিচয়। বিমল করের কথাসাহিত্যের বিশ্লেষণী পাঠে এই বিষয়টিকেই তুলে ধরার প্রচেষ্টা হয়েছে।