‘আমাদিগের আত্মপরিচয় আপনি দিবার রীতি নাই', অন্য প্রসঙ্গে লিখেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র । একথাটা বলতে পারে প্রতিটি সার্থক ছোটগল্প কিংবা আখ্যান। তার হয়ে ওঠার মধ্যেই প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে থাকে। এই ‘আসমান জমিন কথা' নামক গল্পসংকলনেও আছে। আছে রণবীরের অন্যসব বয়ানেও। নামকরণেই ইঙ্গিত পাচ্ছি এখানে আছে ব্রাত্যজনের ভূমিসংলগ্ন জমিনকথা এবং কল্পনার আরেক আকাশ, আসমানকথা। দূরবীক্ষণের মধ্য দিয়ে জমি বা আকাশ দেখা নয়, অণুবীক্ষণের অন্তরঙ্গ আলোকপাত। দেখার এই বিশেষ ধরনই সবকিছু যাকে মহানগরের কৃত্রিম বাস্তব পরাস্ত করতে পারে নি। শৈশব-কৈশোর-যৌবনের বরাকভূমি যেন হয়ে ওঠে মায়াবী নদীর পারের দেশ, এই পৃথিবী একবার পায় যাকে নাকো আর। বাস্তবই স্বপ্ন হয়ে ওঠে স্মৃতির আতসকাচে। পরিচিত মানুষজনের আদল মাত্র থাকে, ওরা হয়ে ওঠে আরেক অস্তিত্ব। মনের ভেতরই যার বসত, তাকে নতুন পাওয়া আলোয় উদ্ভাসিত করে গল্পকথার সাজ। সমস্ত ভাঙনের মধ্যে জেগে থাকে ভালবাসা পায়, টাপুর-টুপুর বৃষ্টি ঝরে সম্পর্কের চোরা-ফাটলের উপর। এরই নাম জীবন যার জন্যে আকাঙ্ক্ষা ফুরোয় না কখনও। গল্পকার রণবীর পুরকায়স্থের এই তো আসমান, এই তো জমিন, যাদের দ্বিরালাপ লক্ষ করে আবিষ্ট তিনি। বহুস্বরিক ও অন্তর্মুখী লিখনশৈলীতে | উন্মোচিত হয়েছে চিরবিস্ময়ের বোধ মানুষ ও তার জগৎ সম্পর্কে যার আরম্ভ আছে কিন্তু শেষ নেই ৷