পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে আজকের এই পৃথিবীতে যদি মহান খোদাতায়ালা আবারও তাঁর প্রিয় হাবীব (সাঃ) কে প্রেরণ করতেন তাহলে আমাদের নবীর (সাঃ) কী ধারণা হত সেই জাতিকে দেখে, তাদের কাজ, তাদের ব্যবহার, তাদের জীবনযাপন দেখে যারা এই দুনিয়ার বুকে আজ মুসলমান রূপে বিচরণ করছে! এবং তিনি তাঁর এইসব অনুসারীদেরকে কী উপদেশ দিতেন যারা এখনও হৃদয়ে পলকা ঈমান বয়ে বেড়ায় ! আমি নিশ্চিত যে, আজ বেশিরভাগ মুসলমানের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চরম অবনতি দেখে এমনই আঘাত পেতেন যা তিনি (সাঃ) পেয়েছিলেন ঐ তায়েফের ময়দানে আর উহুদের প্রান্তরে। আর যে সমস্ত মুসলিম এখনও ঈমানে দৃঢ় আর আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের (সাঃ) প্রতি আত্মোৎসর্গীকৃত তাদেরকে তাঁর (সাঃ) উপদেশ হতো তাঁর উম্মতের এই করুণ ও দুঃখজনক ঈমানকে আবারও জিন্দা করার জন্য আপ্রাণ লড়াই—শুধু আত্মদান, আর কিছু না। তাই, যদি আপনিও আমার সাথে একমত হন আর আমার কথা সত্য বলে মনে হয়, তবে আপনাকে অবশ্যই এই আত্মোৎসর্গকে জীবনের সঙ্গী বানিয়ে নিন। আমি দৃঢ় এটাই আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ও নবী (সাঃ)-র আশীর্বাদ পাওয়ার সুন্দরতম পথ যাতে তাঁর (সাঃ) হৃদয় খুশিতে ভরে যাবে। নিশ্চিত যে, আল্লাহ্র অপার করুণা যে আজ এই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের কোনায় কোনায় মুসলমানের ঈমানকে পুনরায় জিন্দা করতে দলবদ্ধভাবে সংগ্রাম শুরু হয়েছে যা ‘তাবলীগ’ নামে পরিচিত। আপনি পৃথিবীর যেখানেই বসবাস করুন না কেন আপনি আপনার ব্যবস্থা ও অবস্থা অনুযায়ী অংশগ্রহণ করতে পারেন তাদের সাথে যারা আপনার এলাকায় এই রাস্তায় আত্মনিয়োগ করেছে অথবা একাকীভাবেও যতটা সম্ভব। এই যে ছোট্ট বইটি আপনার হাতে এসেছে তা এই প্রচেষ্টারই ফসল। মুসলিম নারী পুরুষের প্রয়োজনে এটা লিখিত যারা ইসলাম সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানেন না, তাঁরা নিজেরা পড়তে পারেন অথবা পাঠ শুনতে পারেন এবং তা তাঁর আত্মীয় ও অন্যান্য মুসলিম ভাই-বোনকে জানাতে পারেন ।
মুহাম্মদ মনজুর নোমানী (১৫ ডিসেম্বর ১৯০৫ – মে ১৯৯৭) ছিলেন একজন ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত। তার লিখিত রচনাগুলির মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো, মাআরেফুল হাদিস, ইসলাম কেয়া হায়। তিনি ১৯২৭ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে স্নাতক হন। সেখানে তিনি আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির অধীনে হাদীস অধ্যয়ন করেন। তিনি চার বছর দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় শায়খুল হাদিসের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং আবুল হাসান আলী নদভীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তিনি এই দলের উপ-আমির নির্বাচিত হন। তিনি আবুল আলা মওদূদীর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। ১৯৪২ সালে মওদুদীর সাথে মতবিরোধের পরে তিনি সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপরে তিনি মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভির তাবলীগী জামায়াতে যুক্ত হন। তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরা ও মজলিসে আমিলাহ (কার্যনির্বাহী পরিষদ)-এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সদস্য ছিলেন। ১৮ শাওয়াল ১৩৩৩ হিজরীতে ব্রিটিশ ভারতের সংযুক্ত প্রদেশের সামভালে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর বাবা সুফি মুহাম্মদ হোসেন ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত ধনী ব্যবসায়ী এবং জমিদার। মনজুর নোমানী নিজশহর সামভালে সিরাজুল উলুম হিলালী সারাই মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছেন । পরে তিনি আজমগড়ের দারুল উলূম মাউতে পড়াশোনা করেছেন। অবশেষে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন যেখানে তিনি দুই বছর অবস্থান করেন এবং দাওরা হাদিসের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ফারেগ হন । দারুল উলূম দেওবন্দে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি , মুফতি আজিজুর রহমান এবং সিরাজ আহমদ রশিদী ।