"প্রজাপতি পলায়ণ ও রক্ত" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: এই দেশে যারা ১৯৭১ এর ভেতর দিয়ে গিয়েছে তারা সারা জীবনের জন্যে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় একাত্তরের স্মৃতি বুঝি শুধু মস্তিষ্কে নয়, এটি বুঝি রক্তের মাঝে ঢুকে গেছে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ভেতর প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। একাত্তরের প্রজন্ম পৃথিবীর সবচাইতে নৃশংস প্রজাতি পাকিস্তানী মিলিটারির নিষ্ঠুর গণহত্যা এবং সব চাইতে ঘৃণিত প্রজাতি রাজাকার আলবদরদের বিশ্বাসঘাতকতা নিজের চোখে দেখেছে। খুব সহজেই এই নৃশংসতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা তাদের পুরাে মানবজাতির ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে দিতে পারতাে। কিন্তু সেটি ঘটেনি। তার কারণ একাত্তরের নয় মাস তারা একই সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের সাহস আর বীরত্ব এবং দেশের সাধারণ মানুষের একের জন্যে অন্যের ভালােবাসাটুকু দেখেছে। স্বাধীনতার আনন্দ কতাে তীব্র হতে পারে সেটি শুধুমাত্র এই প্রজন্ম অনুভব করতে পেরেছে আর কেউ নয়। সেই একাত্তরের প্রজন্ম সেলিম সােলায়মানের লেখা “প্রজাপতি পলায়ন ও রক্ত” বইটির পাণ্ডুলিপিটি আমার পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে । একাত্তরের বিশাল ব্যাপ্তিকে ধারণ করার মতাে ক্যানভাস পৃথিবীতে নেই, তাই তার ওপরে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে, সেই হিসেবে এই বইটি একটু অন্যরকম, কারণ লেখক একাত্তরটি দেখেছেন একজন শিশু হিসেবে। ছােট একটা শিশু একাত্তরে কেমন করে আস্তে আস্তে পাল্টে যেতে পারে, যখন প্রজাপতির পিছনে ছুটে বেড়ানাের কথা তখন কেমন করে রক্ত দেখে অভ্যস্ত হয়ে যেতে হয় সেলিম সােলায়মান আমাদের সেই গল্পটি শুনিয়েছেন।
Salim Solaiman: আড্ডার মোজাজে গল্প বলে যান, সেলিম সোলায়মান; ঝর ঝরে গদ্যে। গল্প করতে করতে কখনো হাল্কা চালে, কখনো তুমুল কৌতুকে আবার কখনোবা তীব্র শ্লেষে উচ্চারণ করেন সমাজ সংসারের বিদ্যমান অসংগতিসমূহের আর ঐসব সত্যসমূহের, যেসব নিয়ে সচরাচর অধিকাংশই মুখ খুলতে নারাজ। উপন্যাস, ভ্রমনপোন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ছড়া বা কবিতা যা’ই লিখেন না কেন তিনি, তাতেই ফুটে তাঁর সেই ধরণটি। চাঁদপুর জেলার সাপদি গ্রামের বহরদার বাড়ীতে জন্ম নিলেও, শৈশব কৈশোর কেটেছে তার কুমিল্লায়। পড়াশোনার শুরু যেমন তাঁর কুমিল্লার দৈয়ারা ফ্রি প্রাইমারী স্কুলে, তেমনি পড়েছেন তিনি বোস্টনের Babson College আর Harvard Business School এ ও। মাঝে জাংগালিয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জুনিয়র হাইস্কুল, ঈশ্বর পাঠশালা, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রামবিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট ম্যানেজম্যান্টে কাটিয়েছেন শিক্ষাসনদজীবন। প্রানিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করেই হয়ে যান বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে। অত:পর বাংলাদেশ, সিংগাপুর, সৌদী আরব, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে ঐ কোম্পানির নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পর, আরোহন করেন কোম্পানিটির শীর্ষতম পদে। বর্তমানে তিনি অন্য আরেকটি বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষপদে আছেন। জীবনঘনিষ্ঠ তাঁর লেখালেখিতে স্পষ্ট, নানা বিষয়ে তাঁর তুমুল কৌতুহল, আর পঞ্চাশের মতো দেশভ্রমনের অভিজ্ঞতালব্ধমানবিক জীবনবোধ। মুক্তিযুদ্ধের সত্যকাহিনী নির্ভর তাঁর প্রথম উপন্যাস ,“প্রজাপতি, পলায়ন ও রক্ত” তুমুল সাড়া ফেলেপাঠক সমাজে, আর দৃষ্টি আকর্ষন করে সুধী সমালোচকদের, ফলে সম্মানিত হন তিনি চট্টগ্রাম একাডেমির বিশেষ সম্মাননায়। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রকাশিত ও চট্টগ্রামের পাঠকনন্দিত পত্রিকা দৈনিক আজাদীতে নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখছেন “দেশ হতে দেশান্তরে” শিরোনামে।