"তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: তনুশ্রী চক্রবর্তীর সঙ্গে হাবিবুর রহমানের পরিচয় ও সখ্য সােভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সােভিয়েত সমাজে তখন চলছে গ্লাসনস্ত-পিরিস্রোইকার সুবাদে এক সর্বব্যাপী পরিবর্তন। বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা; সেইসঙ্গে মানুষের মন, বিশ্বাস, চালচলন। তনুশ্রী আর হাবিবের চোখের সামনে রচিত হচ্ছে। একটি দীর্ঘ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী বিপ্লবের শেষ অধ্যায়। এ হচ্ছে এই কাহিনীর দেশকাল । খােদ কাহিনীর পশ্চাৎপট বাঙলা। কলকাতার মেয়ে তনুশ্রীর সামন্ত পূর্বপুরুষ ১৯৪৭-এ পূর্ববঙ্গ থেকে বিতাড়িত। হাবিবের পূর্বপুরুষরা ছিলেন একই অঞ্চলের মধ্যবিত্ত কৃষক। অসম্ভব নয় যে, হাবিবের পিতামহ তনুশ্রীর ঠাকুর্দার প্রজা ছিলেন। কিন্তু তাতে হাবিব বা তনুশ্রীর কিছু যেত-আসত না, কারণ তাদের সম্পর্ক সহপাঠীর; বন্ধুত্বের; প্রেম বা । প্রণয়ের কোনাে প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু তনুশ্রীর কোষ্ঠীতে নাকি লেখা ছিল যে সে যবনকর্তৃক আক্রান্ত হইবে। তাই কি এক দৈব দুর্বিপাকে’ হাবিব কর্তৃক তার গর্ভসঞ্চার ঘটে? এ-কাহিনীর । কূটাভাষ এই যে, মেধাবী, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, বাম মনােভাবাপন্ন তনুশ্রী কোষ্ঠীতে বিশ্বাস করে। তাহলে কিভাবে অগ্রসর হতে পারে এই কাহিনী? অতঃপর তনুশ্রীর হৃদয়ে কি কোনাে পরিবর্তন সূচিত হয়? বন্ধু হাবিবকে প্রণয়ী হিসেবে সে কি গ্রহণ করতে পারে? এই উপন্যাসে তনুশ্রীর নিজের সঙ্গে নিজের ঠাণ্ডা যুদ্ধ, হাবিবের সঙ্গে তার অদ্ভুত রহস্যময় আচরণ, হাবিবের মরিয়া অনুসন্ধান, তার স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন, মায়াবিভ্রম, বাইরের ঝাবিক্ষুব্ধ আর্থ-সামাজিকরাজনৈতিক পরিবেশের সঙ্গে উভয়ের ভেতরের ঝঞা ও ক্ষরণ মিলেমিশে এক শ্বাসরুদ্ধকর, উত্তেজনাপূর্ণ নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে, যা পাঠককে সবেগে তাড়িয়ে নিয়ে চলে ।
জন্ম বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা জয়পুরহাটে । মস্কোর পাত্রিস লুমুম্বা। গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে সাংবাদিকতা শুরু। করেন। বর্তমানে প্রথম আলাের জ্যেষ্ঠ। সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। গল্প। লেখার শুরু ১৯৮০-র দশকে। তাঁর লেখা উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযােগ্য তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত, ঘােড়ামাসুদ, জুবােফস্কি বুলভার, মাংসের কারবার, পাকিস্তান, দ্বিতীয় খুনের কাহিনি, যেভাবে নাই হয়ে গেলাম, ব্লগার ও অন্যান্য গল্প, বাংলা দেশ ও অন্যান্য গল্প এবং দুধ। তাঁর গল্প ‘দুধ’ শবনম নাদিয়ার অনুবাদে “মিল্ক’ নামে শ্রীলঙ্কাভিত্তিক হিমাল সাউদেশিয়ান শর্ট স্টোরি কমপিটিশন ২০১৯-এ শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে পুরস্কৃত হয়। একই অনুবাদকের অনুবাদে দ্য মিট মার্কেট অ্যান্ড আদার স্টোরিজনামে তাঁর ইংরেজিতে প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ২০২০ সালের আমেরিকান পেন/হাইম ট্রান্সলেশন। ফান্ড গ্র্যান্টস লাভ করে ।