ভূমিকা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কোরআন শরীফ মুসলমানদের প্রাণাপেক্ষা প্রিয় গ্রন্থ। সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফার (সঃ) প্রতি ২৩ বৎসর ধরে (৬১০-৬৩২খৃঃ) এটি নাযিল হয়। বিশ্ব মানবের জন্য এটি সুষ্ঠ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন পরিচালনার সর্ভোত্তম দিশারী। কোরআন আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। এর ভাষা ক্ল্যাসিকধর্মী, অপরিবর্তনীয়। আরবের বাইরে বিশ্বের সব দেশে সব ভাষায় নিরন্তর এর অনুবাদ হয়ে চলেছে। বর্তমান “আল কোরানের বাংলা অনুবাদ”- এই বহরে নতুন সংযোজন।
এই অনুবাদে কয়েকটি দিক আমাকে মুগ্ধ করেছে। মানুষ জানে জান্নাতের স্তর বা সংখ্যা আট এবং জাহান্নামের সাত। আটটি জান্নাত, যথা- জান্নাতুল আদন, জান্নাতুন নাঈম, জান্নাতুল ফিরদাউস ও জান্নাতুল মাওয়া এবং দারুল কারার, দারুল খুলদ, দারুল মাকাম ও দারুস সালাম। সাতটি জাহান্নাম যথা- জাহান্নাম, যাহীম, লাযা, সাকার, সায়ীর, হাবিয়া ও হুতামা। আমাদের দেশে স্কুল কলেজ ধর্ম শিক্ষা বিসয়ে এগুলি পড়ানো ঞয়। কিন্তু প্রচলিত বাংলা ইংরেজী তাফসীর তরজমায় এসব নামবাচক পড়ানো হয়। কিন্তু প্রচলিত বাংলা ইংরেজী তাফসীর তরজমায় এসব নামবাচক বিশেষ্যের অনুবাদ করায় এগুলি কোরআনে আছে বলে মনেই হয় না। এছাড়া প্রচলিত বাংলা ইংরেজী তরজমায় ‘বিল হাক্ক’ শব্দের তরজমা করা হয়েছে সত্যসহ, ইন ট্রুথ। এরূপ অনুবাদ জটিল বটে। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ সত্যসহ কোনআনে সহুস্থানে বিধৃত। বর্তমান অনুবাদে “বিল হাক্ক” শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে যথাযথভাবে, সঠিকভাবে। আমার মনে হয়, এই অনুবাদ যথাযথ হয়েছে। তৃতীয়তঃ আরবী ভাষার প্রচুর শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে এর সাথে মিশে একে সমৃদ্ধ করেছে। কোরআনের এরূপ আরবী শব্দের তরজমা করা হয়েছে ফারসী বা সংস্কৃত ভাষার শব্দ দিয়ে। ফলে জান্নাত হয়েছে বেহেশত বা স্বর্গ এবং জাহান্নাম দোযখ বা নরক। বর্তশান অনুবাদে এসব মূল আরবী শব্দের সঠিক প্রয়োগ হওয়ায় কোরআনের সাথে পাঠকের পরিচয় নিবিড় হবে এবং তাঁর বুঝার জন্য সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
অনুবাদে প্রচুর টিকা টিপ্পনী ও ব্যাখ্যা স্থান পেয়েছে। এসব কোরআন হাদীস, তাফসীর তরজমা এবং নির্ভরযোগ্য বই কেতাব থেকে নেয়া হয়েছে। ফলে বেইটি মিনি তাফসীর হয়ে গেছে।
পুস্তকের নাম “আল কোরানের বাংলা অনুবাদ, টিকা টিপ্পনী সহ।” একেবারেই সাদামাটা নাম। নাম দেখেই বুঝা যায় এর ভাষা সহজ, সরল ও সাবলীল। সমগ্র পুস্তকে এর সাক্ষর আছে।
আমার বিশ্বাস, বাংলা ভাষাভাষী পাঠক পাঠিকা এ পুস্তক থেকে উপকৃত হবেন এবং প্রভূত কল্যাণ লাভ করবেন। আমি এই পুস্তকের ব্যাপক প্রসার কামনা করি।
নাজির আহমদ অধ্যাপক, আরবী বিভাগ এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান, আরবী বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়