ছোট, মাঝারি, বড়, কি গল্প আপনি চান বলুন, পেশাদার কলম ঠিক নামিয়ে দেবে। কত স্লিপ? আজকাল তো যার সাহিত্য নেই, আছে স্লিপ। সম্পাদক মহাশয়রা আজকাল আর লেখা চান না। লেখা আজকাল আবার একসঙ্গে আসে না। বড় বড় লেখকরা স্লিপ দিতে থাকেন। সম্পাদক মহাশয়রা প্রশ্ন করেন, 'কাল ক'স্লিপ দিচ্ছেন! অন্তত পাঁচ স্লিপ দিন।' সাহিত্যের জগতে আর ফলপাকড়ের জগতে বিপ্লব ঘটে গেছে। আগে আম বিক্রি হত টাকায় পাঁচটা হিসেবে। এখন পনের টাকা কিলো। লিচু বিক্রি হত শ' দরে। লিচুরও এখন কিলো। যুগ পালটে গেছে। আমি একটা বড় গল্প লেখার বায়না পেয়েছি। চল্লিশ স্লিপ। তার কম বা বেশি নয়। সেদিন সরকারি অফিসে লিফটে উঠেছিলুম। দেখি লেখা রয়েছে সিকস্টিন পার্সনস। প্রশ্ন জাগল, হাতির মতো চেহারার ষোল জন উঠলে কি হবে! নির্দেশ অনুসারে তো ষোলজনই হল। চল্লিশ স্লিপে যদি চল্লিশ হাজার শব্দ হয়ে যায়। সে তো তাহলে উপন্যাসই হয়ে গেল। বড় গল্প কাকে বলে আমি জানি না। ছোট গল্পকে টেনে বাড়ালেই মনে হয় বড় গল্প হয়। আউর থোরা হেঁইয়ো, বড় গল্প হইল। উপন্যাস-উপন্যাস একটা ভাব থাকবে। যেমন শীত-শীত ভাব। ছুঁচো আর হাতি। ছুঁচো দেখে এক পণ্ডিত বলেছিলেন, এ হল রাজার হাতি, না খেয়ে খেয়ে এই রকম হয়ে গেছে। আর হাতি দেখে বলেছিলেন, এ ব্যাটা বাজার ছুঁচো, খেয়ে খেয়ে অমন হয়েছে। ছোট 'গল্প আর বড় গল্প। একই ব্যাপার। কি গল্প লেখা হবে! প্রেমের গল্প। বিচ্ছিন্নতার গল্প! হতাশার গল্প! রাজনৈতিক গল্প! নাকি ভূতের গল্প। প্রেমের গল্পই চেষ্টা করা যাক। গল্প আর রান্না একেবারে এক জিনিস। নানা উপাদান। নানা মশলা। তারপর আগুনে চাপিয়ে নাড়াচাড়া। যাকে বলে হেলুনি মারা। বা কষা।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি ১৯৩৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং হুগলী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহন করেন । তিনি অনেক উপন্যাস,ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন । তাঁর সবথেকে বিখ্যাত উপন্যাস লোটাকম্বল যা দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচনায় হাস্যরসের সাথে তীব্র শ্লেষ ও ব্যঙ্গ মেশানো থাকে ।ছোটদের জন্য তাঁর লেখাগুলিও খুবই জনপ্রিয় । তাঁর সৃষ্ট ছোটদের চরিত্রের মধ্যে বড়মামা ও ছোটমামা প্রধান ।