সংগ্রাম যেমন দেখেছি নেত্রীর সাথে জনতার পাশে (কিছু অংশ)
পুরানো সেই দিনের কথা আমি রাজনীতিতে আসব এটা কখনো ভাবিনি। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ার মোড়ে আড্ডা মারছি, সেই সময় সিপিএম এবং নকশালদের পারস্পরিক বিবাদ, পাড়ায় হইচই, গন্ডগোল, অশান্তি—তারই মাঝে রেজাল্ট বেরোবে বেরোবে করছে, কোন কলেজে ভর্তি হব- সেই চিন্তা নিয়েই পাড়ায় আড্ডা মারছি। সময়টা কেটে যাচ্ছে নাটক-আবৃত্তি-বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। কখনও মিশনের স্কুলে পড়ার সুবাদে প্রাপ্তি জুটেছে নাটকে অংশগ্রহণে, আবৃত্তির মধ্য দিয়ে, কখনও নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাসে নাটকের মধ্য দিয়ে সুনাম ছড়িয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, পাড়ায় কোনও প্রতিযোগিতায় আমার কপালে একটা পুরস্কারও জোটেনি। কোন কলেজে ভর্তি হব সেই চিন্তাই যখন মগ্ন, অন্ধকারে একটা ট্যাক্সি এসে থামল সামনে। গুটিকয়েক লোক তার মধ্যে। একজন এগিয়ে এসে বলল— কি? তোমার নাম পার্থ? আমি বললাম হ্যাঁ। তোমাকেই তো আমরা খুঁজছি। আমি বললাম কেন? পাশে তখন দাঁড়িয়ে ছিল কৃষ্ণ, বাবন, বাকা, স্বপন, বাবু গুপ্তরা। বলল, তুই চিনিস না? এ হল আমাদের কংগ্রেসের যুবনেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আমি সলজ্জভাবে তাকিয়ে বললাম— হ্যাঁ, বলুন কী? বললেন, চলো না, তোমাদের নিয়ে আমরা কথা বলব। ওঁর পাশে তখন যাঁরা ছিলেন পরে জেনেছিলাম নাম ছিল সুজিত চ্যাটার্জি, শিবনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিজয় বসু, বিপ্লব রায়—তখনকার কংগ্রেসের সেই সময়কার তাবড় তাবড় নেতারা। পরবর্তীকালে বিনয় সরকারের হাত দিয়ে যিনি আমার গৃহশিক্ষক ছিলেন এবং লোকালয়ে যাঁর পরিচয় ছিল সিপিএমের নেতা হিসেবে, তাঁরই হাত ধরে অমৃতাভ ব্যানার্জি পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক আশুতোষ কলেজে—তিনিও বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী অধ্যাপক ছিলেন। তাঁরই সহযোগিতায় ভর্তি হয়েছিলাম আশুতোষ কলেজে।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।