স্মৃতিকে কতোটা পিছনে নেওয়া যায়? নিশ্চয়ই চেতনার পিছনে নয়। আমার ধারণা শুধুমাত্র চেতনাতেও স্মৃতি নেই, যদি থাকেও তা আধো-অন্ধকারেই ডুবে থাকে। আত্মচেতনা থেকেই স্মৃতির শুরু। জন্মের পর থেকে চেতনা আছে, গূঢ় রহস্যময় চেতনা—কিন্তু স্মৃতি নেই। চেতনা-আত্মচেতনার মাঝখানের সান্ধ্য জায়গাটায় অনেকবার ফিরে যেতে চেয়েছি। সে যেন শুধু চাঁদের আলোই নয়, স্বপ্নের চাঁদের আলো। কোনো কিছুই ঠিকমতো ঠাহর হয় না। বস্তু বস্তুর চেহারা ত্যাগ করে, ভয় মূর্ত চেহারায় সামনে এসে দাঁড়ায়, কল্পনাও বস্তু হয়ে ওঠে। স্মৃতির এই ভোরবেলা নিয়ে কিছু কথা! এতে কারও আগ্রহ থাকার কথা নয়। তবু অস্তিত্বের মানে তো একটাই, তা হলো কোনো মানেই নেই তার। সারাজীবন মানুষের কোনো না কোনো একটা অর্থ খুঁজতেই কেটে যায়, সে বুঝতেও পারে না। পশুর মতো জীবন যে কাটায় সে নয়, অতিচেতন জীবন কাটায় যে সে-ও নয় । জ্ঞানে-অজ্ঞানে এই খোঁজটুকুর জন্যেই মানুষের সমস্ত বাঁচাটা অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে যায়। একেবারে একা হলে সে থাকে অতিষ্ঠ। অন্যের কাছে সে যায়; সুখে যায়, দুঃখে যায়, ধনে-সম্পদে দারিদ্র্যে অভাবে যায়, প্রীতিতে যায়, অপ্রীতিতেও যায়। বাঁচাতে যায়, ধ্বংস করতেও যায়। মৃত্যু পর্যন্ত একনাগাড়ে সেই যাওয়াটার সকালবেলা এখন। সূর্য কেবল উঠছে।
সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় একটি নাম হাসান আজিজুল হক। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান জেলার যবগ্রামে তার জন্ম । নিজের গ্রাম থেকে স্কুলের পড়া সাঙ্গ করে ওপার-বাংলায় চলে যান। তিনি, দর্শনশাস্ত্রের পড়াশোনার পর অধ্যাপনা করেন সেখানকার কয়েকটি কলেজে। ১৯৭৩ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক, এখন অবসরপ্রাপ্ত। অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘকাল অনেক গল্পের স্ৰষ্টা তিনি। গল্প অনেক লিখেছেন, কিন্তু, রহস্যময় কোনো কারণে, উপন্যাস-লেখায় বিশেষ আগ্ৰহ দেখান নি প্ৰতিভাবান এই কথাসাহিত্যিক । এ-বইটি প্ৰকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকসমাজের উৎসুক প্রতীক্ষার যেন অবসান হলো, আমাদের হাতে এসে পৌঁছল হাসান আজিজুল হকের হৃদয়স্পশী এই উপন্যাস : ’আগুনপাখি’ ।