ভূমিকা ভারত ভূখণ্ডের স্বাধীনতা প্রাপ্তি পৃথিবীর ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ঘটনা । ঐতিহাসিক এবং সমকালীন রাজনীতিবিদগণ এই ঘটনার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছেন যে এই প্রথম বিনা যুদ্ধে কেবল পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একটি দুরন্ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি স্বেচ্ছায় তার উপনিবেশ ছেড়ে চলে যায়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকে তাই সচরাচর ক্ষমতা হস্তান্তর বা ট্র্যান্সফার অফ পাওয়ার বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ক্ষমতা অর্জন ন—ক্ষমতা প্রাপ্তি। ইংরেজ ক্ষমতা দান করে, আর ভারতবর্ষ তা অবনত মস্তকে গ্রহণ করে । ক্ষমতা হস্তান্তর শব্দটির তাৎপর্য অনেক । ইংরাজরা ক্ষমতা ছেড়ে আসার মাধ্যমে বিশ্ব সমক্ষে তাদের মহত্ব বা উদারতা প্রদর্শন করেছিল। ভারতীয় উপমহাদেশ সেই দান গ্রহণ করে প্রকারান্তরে এই কথাই মেনে নিয়েছে যে বিগত প্রায় দুশো বছর ধরে স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য এখানকার মানুষ যে লড়াই করেছিল তার ফল স্বরূপ স্বাধীনতা লাভ ঘটেনি। ইংরাজরা ক্ষমতা না ছাড়লে ভারতবর্ষের ক্ষমতা তথা স্বাধীনতা লাভ ঘটত না। ক্ষমতা দানের শর্ত হিসাবে রাজশক্তি উপমহাদেশকে দ্বিখণ্ড করার প্রস্তাব দিয়েছিল । কংগ্রেস চিরকাল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশৃংখলা এড়ানোর জন্য ভারত ভাগ মেনে নিয়েছিল। গান্ধীজি দলীয় নীতির প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপনের জন্য ব্যাক্তিগত ভাবে দেশবিভাগ না চাইলেও এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলেন। প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পরেও তা রূপায়িত করার জন্য অনেক রকম বিপত্তি ও অনর্থ সৃষ্টি হয়েছিল। পাঞ্জাব ও বাংলা বিভাগের প্রশ্নে অনেক রকম জটিলতা দেখা দিয়েছিল দেশীয় রাজ্যগুলির ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। এই বইতে এই সব ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত বর্ণনা করা হয়েছে। ঘটনাক্রমের বিবরণীর জন্য প্রধানত সরকারী নথি-পত্র ও সমকালীন সংবাদপত্র সমূহের উপর নির্ভর করা হয়েছে। বইতে উল্লেখিত তথ্যসমূহের মধ্যে বড় রকমের অভিনবত্ব কিছু নেই। কিন্তু তথ্যগুলির প্রামাণিকতা জ্ঞাপক নথিগুলি সুলভ নয়। সেগুলি যথাসম্ভব অবিকৃত রেখে বঙ্গানুবাদ সহ এখানে পেশ করা হয়েছে। এই বইয়ের অভিনবত্ব হয়ত এইটুকুই।