জোড়াসাঁকো ঠাকুরপরিবারকে ঘিরেনবজাগরণের আলোয় আলোকিত পরিবারটি শুধু সাহিত্যে নয়, সংস্কৃতিতে নয়, জীবনের সর্বস্তরেই পথপ্রদর্শক। নারী-স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠাতেও এই পরিবারের অবিস্মরণীয় ভূমিকা । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথের পত্নী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী হয়ে উঠেছিলেন নারী-সমাজের প্রেরণাস্থল । শুধু সেকালেই প্রেরণার উৎস ছিলেন না, একালেও অবস্থান বদলায়নি তাঁর। আজও প্রাণিত করে চলেছেন তিনি। নারীকে আলোকিত করার জন্য জ্ঞানদানন্দিনী দেবী পথে নামেননি কখনো। নিজের আচার- আচরণ ও জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেলেন নারী-স্বাধীনতার মাধুর্য। ঠাকুরপরিবারের ছোটোরাও লিখুক, বিকশিত-প্রস্ফুটিত হোক তাদের সাহিত্য- প্রতিভা । এই বাসনাতেই ‘বালক’ পত্রের প্রকাশ-পরিকল্পনা করেছিলেন জ্ঞানদানন্দিনী দেবী। সম্পাদনাকর্মে মেজবউঠাকুরানীর যোগ্য সহযোগী ছিলেন তরুণ রবীন্দ্রনাথ। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বালক-এর জন্যই প্রথম কলম ধরেছেন। করেছেন গল্পের অনুবাদ । আবার লিখেছেন ব্যায়াম নিয়েও। সংখ্যায় তেমন বেশি না হলেও লিখেছেন ‘ভারতী’তেও। ছোটোদের কথা ভেবে জ্ঞানদানন্দিনী দেবী লিখেছিলেন দু'টি অনবদ্য নাটকও। কন্যা ইন্দিরার দ্বারা অনুলিখিত স্মৃতিকথা তো আছেই, গ্রন্থিত হয়েছে চিঠিপত্রসহ অন্যান্য রচনাও। কয়েকটি লেখা এই প্রথম মুদ্রিত হল। পরিশিষ্ট-অংশে রাখা হয়েছে জ্ঞানদানন্দিনীকে লেখা সত্যেন্দ্রনাথের মনোরম পত্রমালা। প্রেমময় পত্রগুচ্ছে সত্যেন্দ্রনাথের সাহসী মনেরও পরিচয় গোপন থাকেনি। তাঁর আধুনিক মনস্কতা আমাদের অভিভূত করে। মহীয়সী জ্ঞানদানন্দিনীর সমস্ত রচনা একত্রিত করে গ্রন্থাকারে এই প্রথম প্রকাশিত হল । নিঃসন্দেহে এ এক ঐতিহাসিক কাজ ।