ঈশ্বরীতলার রূপোকথা আটটা রাজহাঁস দুটো (বড় খুকীর শখ), ছাগল পাঁঠা পাঁঠি নিয়ে এগারোটা, অ্যালসেসিয়ান একটা (মাদি), মুরগি একান্নটা (সবই হোয়াইট লেগইন), শান্তার তিনটি আশ্রিত বেড়াল (একটি হুলো), দুটি খুকী আর একটি বউ নিয়ে অনাথের এই চিড়িয়াখানা। এ-ছাড়া বাড়ির গায়েই ঝোপেঝাড়ে গুটিকয় বিষধর এবং কয়েকটি নির্বিষ জিনিস আছে। সাপুড়েরা এসে কেউটে পেলে ধরে নিয়ে যায়। নির্বিষ দাঁড়াশ সাপ পেলে ছেড়ে দেয়। তারা কিশোর বালকের মতোই ফন ফন করে আলের ওপর ফণা তুলে মৌজা ঈশ্বরীতলার এক দাগ থেকে আরেক দাগে চলে যায়। লম্বায় সাত-আট ফুট। এক বেলায় তিন-চারটে মৌজা পার হয়ে যাবে পাখির ডিমের লোভে ব্যাঙের লোভে। যখন যেমন পায় আর কি। ফাল্গুন মাসের জ্যোৎস্না রাত। ইলেকট্রিক ট্রেন, স্টেশনবাজার, ধানের গোলা, ব্যাংকবাড়ি, গম ভাঙানোর কল, আলুরচপের দোকান, ইরিগেশনের ক্যানাল-ব্রীজ পেরিয়ে এসে অনাথবন্ধু বসু তার বাড়ির রাস্তা ধরল। এখন এ জায়গায় সত্যযুগ। ক্যানালের গা ধরে লাল-সুরকির রাস্তা। এই আধা গাঁ-গঞ্জের সবেধন খেলার মাঠ এদিকেই। তারপর কলাগাছের জঙ্গলে ঘেরা এক-একখানা বসতবাড়ি। রাস্তায় মাঝে মাঝে ডালপালা ছড়ানো খিরিশ গাছের বিশাল ছাতা। তিনখানা গেরস্থ ঘর ছাড়িয়ে অনাথের নতুন বাড়ি। নতুন লাইনটানা ইলেকট্রিক আলোয় বাড়িটা এখন সন্ধেরাতের স্টীমারের ডেক একদম। চারদিকে অন্ধকার। মাঝখানে উঁচু ভিতের বাড়িটা আলো-ঝলমলানো। • প্রথমে তীরবেগে ছুটে এসে বাঘা তাকে রিসিভ করল। বয়স দেড় বছর। এর ভেতরেই তিনজন চাষীকে কামড়েছে। প্রত্যেককে পনের টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। গম্ভীর কালোয়াতি গলায় ডাকে। ভীষণ ভীতু। গাঁয়ের দিশী কুকুরেরা একজোট হয়ে তাড়া করলে লেজ তুলে পালাবে। উঠোনে শান্তা একটা গর্ত করে ফ্যান ঢেলে দেয় রোজ। চুক চুক করে খায়। ইদানীং বড়ি দিয়ে রান্না-লাউশাকও ফেলে না। চেটে খেয়ে নেয়।
Shyamal Gangopadhyay (২৫ মার্চ, ১৯৩৩ - ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০১) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সম্পাদক ছিলেন। ছদ্মনাম- বৈকুন্ঠ পাঠক। সাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অবিভক্ত ভারতের খুলনা্তে(অধুনা বাংলাদেশ)। তার পিতার নাম মতিলাল ও মাতা কিরনবালা। খুলনা জিলা স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং বেলুড়ে ইস্পাত কারখানার কাজে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে স্নাতক পাশ করে চেতলায় শিক্ষকতার চাকরিও করেন কিছুকাল। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন, ১৯৬১ সালে আনন্দবাজারে যোগ দেওয়ার পর তার ছোটগল্প হাজরা নস্করের যাত্রাসঙ্গী, ধানকেউটে ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস বৃহন্নলা, কিন্তু দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে কুবেরের বিষয় আশয় প্রকাশিত হওয়ার পরেই শ্যামলের লেখনী বাংলা পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। ব্যক্তিজীবনে বোহেমিয়ান, সুরসিক ও আড্ডাবাজ ছিলেন তিনি। আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা সন্তোষকুমার ঘোষের সাথে তার মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি যুগান্তরে যোগ দেন। যুগান্তরের সাহিত্য পত্রিকা অমৃত সম্পাদনা করতেন। দেশভাগের ওপর রচিত তার উপন্যাস আলো নেই। তার শেষ উপন্যাস হল গঙ্গা একটি নদীর নাম। ১৯৯০ সালে অবসরের পরে আজকাল পত্রিকা ও সাপ্তাহিক বর্তমানে নিয়মিত লিখতেন তিনি। গ্রামীন জীবন, চাষবাস, সম্পর্কের জটিলতা ইত্যাদি শ্যামলের রচনার বৈশিষ্ট্য। ছোটদের জন্যে সাধু কালাচাদের গল্প, ভাস্কো ডা গামার ভাইপো, ক্লাস সেভেনের মিস্টার ব্লেক ইত্যাদি বই লিখেছেন। ১৯৯৩ সালে শ্যামল সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন তার বিখ্যাত উপন্যাস শাহজাদা দারাশিকোহ বইটির জন্যে। তার সম্পাদিত গ্রন্থ বাংলা নামে দেশ। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দেশ বিদেশের নানা ভাষাতে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।