"আকবর দ্য গ্রেট" বইটির ফ্ল্যাপের লেখা: আকবর মহান তাঁর মহানত্বের অনেকগুলাে দিক আছে। সেগুলাে কোনাে সংকীর্ণ অথবা গোড়া ধর্মীয় দৃষ্টিতে দেখার বিষয় নয়। সেভাবে দেখতে গেলে তার অনেক কর্মকাণ্ডই অসার মনে হবে। আকবরের সবচেয়ে বড় কৃতিতু ছিল রাজ্য বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সুচারুভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থাপন করা। এগুলাে করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভাবনার প্রয়ােজন ছিল। এই রাষ্ট্র ভাবনার মূলে ছিল সে যুগের রীতি অনুযায়ী শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন। ভারতে আকবর প্রথম ব্যক্তি যিনি অখণ্ড রাষ্ট্রভাবনা থেকেই সেটা করেছিলেন। তিনি “জিজিয়া’অমুসলিমদের থেকে আদায়কৃত ‘যুদ্ধকর’ এ জন্যই তুলে দিয়েছিলেন, যেহেতু হিন্দুরা দেশরক্ষার্থে সেনা বাহিনীতে অংশ নিচ্ছে, সেহেতু এই কর নেওয়ার আর যৌক্তিকতা নেই। এই জায়গাটিতে উভয় সম্প্রদায়ের কিছু ঐতিহাসিকের মধ্যে এক ধরনের কপটতা লক্ষ করা গেছে, প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দু ঐতিহাসিকেরা আকবরের মাথা-মুণ্ডুহীন প্রশংসা করেছেন এবং সেই সুযােগে ইসলাম ও মুসলিম শাসকদের হিংস্র সমালােচনা করেছেন। মুসলিম ঐতিহাসিকরা এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ইসলামে “জিজিয়া কর নিয়ে সুসংহত নীতি এবং বিধান আছে। সে সব জেনে, না বুঝে উগ্র এবং হিংস্র সমালােচনা কূপমুণ্ডকতারই নামান্তর। তবে, ইসলাম সম্পর্কে একটি কথা সুস্পষ্টরূপে জেনে রাখা ভালাে যে, ইসলামের কোনাে বিধি-বিধান মানুষকে কষ্ট দেওয়ার নিমিত্ত নয়। আকবর অন্য মােগল সম্রাটদের ন্যায় পদ্ধতিগত শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত ও বিদ্বান ছিলেন না। কিন্তু প্রতিভা ও বংশগত সূত্রে প্রাপ্ত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁকে সম্রাট হিসেবে অনেক উচ্চতায় তুলে দিয়েছিল।
Muhammad jalal Uddin Bisshas জন্ম ১০ জানুয়ারি ১৯৫৯। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জেলা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা ও থানার চৈতা গ্রামে বিখ্যাত বিশ্বাস পরিবারে। পিতা মুহম্মদ তছিমুদ্দীন বিশ্বাস (১৯১৭-১৯৮০), মাতা অহিদা খাতুন (১৯২৩-২০০৮)। এগারাে ভাই-বােনের মধ্যে নবম। শিক্ষা-দীক্ষা ভারতে। ভাষা শিক্ষা ও ভাষা চর্চা আজীবনের সাধনা। সাংবাদিকতা ও গণসংযােগে ডিপ্লোমাও করেন গত শতাব্দীর আশির দশকে। বহুমুখী প্রতিভাধর কবি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভিড়ের মাঝে আমরা দুজন’ (১৯৮৯) কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া আছে কাব্য আমপারা' (২০০০), ঢাকা, কালিদাসের মেঘদূত' (২০০৬), ইকবালের শ্রেষ্ঠ কবিতা' (যন্ত্রস্থ), গালিবের শের (যন্ত্রস্থ)। আছে। উপন্যাস 'যমুনার ধারা বহে' (২০০৪), মােল্লা নাসিরুদ্দীন (২০০৪), অনূদিত উপন্যাস ‘রক্ত রাঙা পথ’ (২০০৫), একটি প্রেমের স্মৃতি' (২০০৮), মূল ভাষা ঠেট আউধী থেকে অনুবাদ করেন মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদমাবত' (২০০৮)। বিশ্বনবী হজরত মুহম্মদ (স.) সম্পর্কে তাঁর প্রণীত ও অনূদিত গ্রন্থ সংখ্যা বাংলা ভাষায় সম্ভবত তারই সবচেয়ে বেশি। ধর্ম-ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ভাষাতত্ত্ব, ব্যাকরণ বিষয়ক গ্রন্থাদিও প্রকাশিত হয়েছে ঢাকা এবং কলকাতা থেকে। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ‘মােগল সম্রাট হুমায়ুন’ (২০০৫), মােগল শাসন ব্যবস্থা' (২০০৭), আলবিরুনির ‘ভারতত্ত্ব' (২০০৭), ‘ফিকহুস সিরাত' (২০০৮), ‘বেহেস্তি জেওর (২০০৯) প্রভৃতি গ্রন্থ। ঐতিহ্য'-র তাঁর নবতম সংযােজন ড. ভােলানাথ তেওয়ারির ‘ভাষাবিজ্ঞান ও মােগল সম্রাট বাবরের আত্মকথা 'বাবরনামা'। ইবনে বতুতার সফরনামা (২০০৪) সহ এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৮০-র অধিক। জেলা উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার মহান সন্তান শহীদ তিতুমীর, মাওলানা আকরম খাঁ, আল্লামা রুহুল আমীন, শেখ আবদুর রহিম, কবি শাহাদাত হােসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখের সােনালি শৃঙ্খলের ধারাবাহিকতায় ইনি অন্যতম মহান সংযােজন বলে অভিহিত হন। পেশা সাহিত্য।