ডঃ দেবব্রত নস্করের অখণ্ড ২৪ পরগণার পালাগানের উপর লিখিত গবেষণা নিবন্ধটি “চব্বিশ পরগণার লৌকিক দেবদেবী : পালাগান ও লোকসংস্কৃতি জিজ্ঞাসা” পড়ে আমি বিশেষ আনন্দিত ও লাভবান হয়েছি। চির-উপেক্ষিত দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রতি শাসকের অবহেলা ও বুদ্ধিজীবী বাঙালীমাত্রেরই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাব আছে। এই অঞ্চলে যেই আসে সেই বলে এখানে চাষাবাদের জমি ছাড়া আর কিছু নেই। এই অবস্থায় যখন আমি দক্ষিণ ২৪ পরগণানিবাসী শ্ৰীমান দেবব্রতের সুবিশাল গবেষণা গ্রন্থটি হাতে পেলাম তখন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। মহাশূন্যের মাঝখানে সুখৈশ্বর্যপূর্ণ এক সুরম্য প্রাসাদতুল্য নিবন্ধগ্রন্থ । দক্ষিণবঙ্গের ঘনবসতিপূর্ণ প্রায় অশিক্ষিত শ্রমজীবী মানুষের সংস্পর্শে এসে অসীম ধৈর্য ও আসুরিক শক্তির দৌলতে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ, সুদক্ষ সম্পাদনা ও অভ্রান্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে লোকসংস্কৃতিক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। গ্রন্থটি যেকোনো সহৃদয় পাঠকের কাছে নানা কারণে সারবান বলে মনে হতে পারে ৷ প্রথমেই চোখে পড়বে এর বিষয়বস্তুর- অভিনবত্ব। নিজের আবিষ্কৃত বিষয়ে গবেষণা করাটা যেমন গৌরবের, তেমনি অজানার প্রতি নিষ্ঠাবান পাঠকের কৌতূহল উদ্ভিক্ত করাটা আনন্দের। রবীন্দ্রনাথ এক সময় ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ প্রসঙ্গে বলেছিলেন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ কি ধর্মচিন্তা করে, কি ভাষায় কথাবার্তা বলে ছাত্রদের তা জানতে হয়, নইলে দেশকে জানা যায় না। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ হয় হিন্দু, নয় মুসলমান। নিজেদের সরল বিশ্বাস অনুযায়ী এরা ধর্ম চর্চা করে, মাঝে মাঝে ধর্মীয় মেলার আয়োজন করে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ এই সব মেলায় জমায়েত হয় রোগনিরাময়ের, বিপদভঞ্জনের আশায়। এমন অনেক লৌকিক দেবদেবীর মাহাত্ম্য কথা নিয়ে পালাগান প্রচলিত আছে। । শ্রীমান। দেবব্রত সেগুলি যত্নসহকারে সংগ্রহ করে আমাদের উপহার দিয়েছেন। দেশের মঙ্গল ও জাতীয়-সংহতির পক্ষে এগুলি নিঃসন্দেহে মূল্যবান উপাদান । আমি আশা করি এই কারণে গ্রন্থটি লোকসংস্কৃতির ধারক ও বাহকদের কাছে এবং এই বিষয়ে উৎসাহী গবেষকদের কাছে নিশ্চয়ই সমাদৃত হবে।
Title
চব্বিশ পরগণার লৌকিক দেবদেবী : পালাগান ও লোকসংস্কৃতি জিজ্ঞাসা