সত্যসন্ধানী সতীনাথ ভাদুভী : জাগরী ও ঢোঁড়াইচরিতমানস (কিছু অংশ)
জাগরী সতীনাথের সাহিত্যচর্চার প্রমাণ স্কুল ম্যাগাজিন বা পরে “বিচিত্রা” ১৩৩৮। “নবশক্তি” পত্রিকায় গান্ধীজী বিষয়ক প্রবন্ধ বা স্যাটায়ার জাতীয় রচনা প্রকাশ পেলেও প্রকৃত অর্থে তাঁর সাহিত্যিক জীবনের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ পর্বের সূচনা ১৯৪২-৪৩-এ ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলের নির্জন সেলে। ১৯৪২-এর আগস্ট আন্দোলনে গান্ধীবাদী এক্স নাম্বার (অর্থাৎ অতি সাংঘাতিক) ডেটিন্যু হয়ে প্রথমে পূর্ণিয়া জেলে ও পরে জেলভাঙ্গা আন্দোলনের অংশীদার সন্দেহে ভাগলপুর সেন্ট্রাল জেলে বদলি হন। এর আগে ১৯৪০-এ সত্যাগ্রহী রূপে, ১৯৪১-এ ছমাস ও পরে ১৯৪৪-এ ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য কারাবাস করেন। ১৯৪২-এ সতীনাথ ছিলেন প্রথম শ্রেণীর বন্দী। কিন্তু জেলের অন্যান্য কোলাহল থেকে দূরে নিজেকে নিজের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে পেতে চেয়েছিলেন। জেল সুপারকে বলে ট্রায়াল সেলে বসে লিখেছিলেন “জাগরী”র চারটি অধ্যায়—ফাঁসির সেল, বাবা—আওরৎকিতা— নীলু। ব্যক্তিগত জীবনের বহু ঘটনা, বহু চরিত্র, পূর্ণিয়ার রাজনৈতিক সামাজিক পরিবেশও মানুষ, জেলের বিচিত্র ঘটনা, বন্দীদের বিচিত্র মানসিকতা ধরা পড়েছে “জাগরী” উপন্যাসে । বিহার-পূর্ণিয়া-মজঃফরপুর ৪২-এর আগস্ট আন্দোলনে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিল— সে ঘটনায় সতীনাথ প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিলেন। প্রথমবার হাজারিবাগ জেলে এসে দেখতে পান তাঁর পূর্বপরিচিত গান্ধীবাদী নেতা পুরুলিয়া জেলাস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিবারণ দাশগুপ্ত ও তাঁর ভাই সুধীর দাশগুপ্তকে। এই প্রধান শিক্ষক ১৯৩০-এ গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করে চাকরী থেকে ইস্তফা দেন। এই চরিত্রের ছায়া পড়েছে বাবা চরিত্রে। তাছাড়া পূর্ণিয়া জেলা কংগ্রেস সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা গোপালকৃষ্ণ রায় ও নিজের পিতার আদর্শ জীবন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন লেখক বাবা চরিত্র সৃষ্টিতে। বিলু, নীলু স্বয়ং লেখকের রাজনৈতিক ভিন্নমতাদর্শের বাহক। মা, জ্যাঠাইমা প্রভৃতি চরিত্রের মধ্যে ব্যক্তিগত জীবনে দেখা রমণীর স্নেহময়ী রূপটিকে শাশ্বত করে রেখেছেন।
Title
সত্যসন্ধানী সতীনাথ ভাদুভী : জাগরী ও ঢোঁড়াইচরিতমানস