ফ্রিল্যান্সার (Freelancer) এই ইংরাজি শব্দটির মানে হল মুক্ত বর্শাধারী। মধ্যযুগে ইউরােপে নাইটরা মুক্ত বর্শা নিয়ে নানা দুঃসাহসিক কাজকর্ম করে বেড়াতেন। আবার মধ্যযুগে ইওরােপে একদল স্বনিয়ােজিত সৈনিক থাকতেন। তাঁরা যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী। কিন্তু কোনও রাজার সৈন্যদলে নাম লেখাতেন না। কারণ, সৈন্যদলে নাম লেখালেই তাঁদের নানা বিধিনিষেধের আওতায় পড়ে যেতে হবে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। কাজের জন্য নানা জবাবদিহি করতে হবে। এঁরা তাই যুদ্ধবিদ্যা ভালাে করে রপ্ত করে যখন যেখানে ডাক পড়ত তাদের পক্ষে ডাই করতেন। বলা বাহুল্য এজন্য নগদ বিদায়ের ব্যবস্থাও ভালাে থাকত। এইসব যােদ্ধাদের গায়ে থাকত বর্ম। এক হাতে বর্শা, আর এক হাতে ঢাল। তারা এই বর্শা হাতেই ঘুরে বেড়াতেন এ-রাজ্য সে-রাজ্য। যিনি ডাকবেন তিনি তার। এঁরা মার্সিনারি বা ফ্রিল্যান্স যােদ্ধা। মার্সিনারি যােদ্ধারা কিন্তু এখনও আছেন। যদিও আজ তারা অস্ত্র হিসাবে আজ আর বর্শা বহন করেন না। সাংবাদিকতা গােড়ার দিকে একজন বা দুজনের প্রয়াস ছিল। যাকে বলে ‘ওয়ানম্যান শাে’। যিনি সংবাদ সংগ্রহ করছেন, তিনিই লিখছেন, তিনিই কমপােজ করছেন, প্রুফ দেখছেন, আবার তিনিই ছাপছেন। ইওরােপে সংবাদপত্রের পূর্বসূরি নিউজ বুক। ইংলন্ডে সপ্তদশ দশকে নিউজ বুক বের হত। নামেই প্রকাশ এগুলি বই। আর বই লেখা হত মুখ্যত একক প্রচেষ্টায়। সেখানে যিনি লেখক তিনিই সম্পাদক এবং তিনিই প্রকাশক। নিউজ বুক আদতে ছিল এক একটি সমসাময়িক ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা আট থেকে চব্বিশ পাতার এক একটি পুস্তিকা। এইসব নিউজ বুকে প্রকাশের তারিখ থাকত তবে ধারাবাহিকতা বজায় থাকত না। পত্রপত্রিকার বৈশিষ্ট্য নিয়মমাফিক প্রকাশ ও প্রকাশের ধারাবাহিকতা। যেমন দৈনিক, সাপ্তাহিক মাসিক, দ্বিমাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি। এখন এগুলি নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে থাকে। কিন্তু নিউজ বুক প্রকাশনায় নিয়মিত প্রকাশের কোনও গ্যারান্টি ছিল না। ইওরােপে আধুনিক সংবাদপত্র বেরুতে লাগল ১৬২২ সালের ২৩ মে থেকে। ওই সময় লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয় ‘উইকলি নিউজ’ জার্মানি, হাঙ্গেরি, বােহেমিয়ার খবরাখবর। সে যুগে আধুনিক সংবাদপত্রের ধ্যানধারণা গড়ে ওঠেনি। সংবাদপত্র প্রকাশও জটিল ছিল না। অনুমান করা যায় সংবাদপত্র সে সময় ছিল সম্পাদকের।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।