ফ্ল্যাপে লিখা কথা সুন্দর করে কথা বলার আগ্রহ সবারই আছে। সুন্দর করে যারা কথা বলেন, তাদের কথা থেকে রুচি আর ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
সুন্দর করে কথা বলাটাও শিল্প। সুন্দর মনের পরিচয় দেয়ার জন্যও কথাই হতে পারে অবলম্বন।
আকর্ষণীয় কণ্ঠস্বর না-হলে সুন্দর করে কথা ভলা যায় না, এমনটা কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু শুধু কণ্ঠস্বর আর শুদ্ধ উচ্চারণই সুন্দর কথা বলার জন্য সহায়ক নয়। সঠিক উচ্চারণ আর ব্যক্তিত্ব দিয়েই মানুষ সুন্দর করে কথা বলতে পারেন।
যাঁর চিন্তা যতো পরিষ্কার, যাঁর জ্ঞান যতো গভীর, যাঁর মন যতো সংবেদনশীল-তাঁর কথা বলাটাও তেমনি আকষণীয় হয়। অনেক অনেক কথা না-বলে যিনি অল্প কথায় অনেক কিছু বোঝাতে পারেন তিনিই সুন্দর কথক।
আমরা যদি একটু আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করি তবেই চর্চা করে সুন্দর কথা বলার অভ্যাস করতে পারি। নিজেকে সুন্দর বাচনভঙ্গির মাধ্যমে সবার কাছে উপস্থাপন করতে পারলে জীবন গঠন অনেক সহজ আর আনন্দময় হয়ে উঠবে।
রবিশঙ্কর মৈত্রীর এই বই সুন্দর করে কথা বলার জন্য একটা নিরদেশিকা মাত্র, চর্চাটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছের উপরই নির্ভর করছে।
প্রসঙ্গ : সুন্দর কথা সুন্দর কথা বলা একজন সুন্দর-সম্পন্ন-মানুষের অন্যতম একটি গুণ। সুন্দর কথা বলা একটি শিল্প। যিনি সুন্দর কথা বলেন, তিনি শিল্পী, বাক্শিল্প।
কারে চেহারা ভালো হলে বলি, সুন্দর। এই সৌন্দর্য তার জন্মগত রূপ। কেউ সুকণ্ঠের অধিকারী হলে বলি-আহা, কী সুন্দর গলা! কেউ যখন খুব সুন্দর গান করে শ্রোতাদের প্রিয় হয়ে ওঠে, আমরা বলি, জন্মগত প্রতিভা। এভাবে নানা বিষয়েই আমরা সৌন্দর্য-এর তারিফ করে থাকি।
কিন্তু কেউ যদি দেখতে কম সুন্দর হন! তিনি যদি পরিচচ্ছন্ন, পরিমিত দৃষ্টিনন্দন সাজেন, মানানসই পোশাক পরেন, তবে কিন্তু কম-সুন্দর ব্যক্তির চেহারায়ও সৌন্দর্য-এর আলো ফুটে ওঠে। আমরা দেখি, জন্মগত প্রতিভা ছাড়াও অনেক গায়ক কেবল ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে শ্রোতার মন জয় করে ক্রমে জনপ্রিয় গায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তেমনি জীবনের সব ক্ষেত্রে আমরা দেখি জন্মগতপ্রতিভা ছাড়াও একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ক্লান্তিহীন অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনন্য হিসেবে নিজেকে উজ্জ্বল করেছেন।
কণ্ঠস্বরের সৌন্দর্যকে আমরা জন্মগত বলে ধরে নিতে পারি। কিন্তু কথার সৌন্দর্যকে জন্মগত সৌন্দর্য বলতে পরি না। কেবল সুন্দর কণ্ঠস্বরই সুন্দর কথার পূর্বশর্ত নয়। সুন্দর কথার প্রধান শর্ত তার ভাষা, তারপর তার বাচনভঙ্গি, তার কণ্ঠস্বর। শিল্পীর ভাষাবোধ আর তার যথাযথ প্রয়োগের ফলেই কথার সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
সুন্দর কথা বলা অনেকটাই চর্চাসাপেক্ষ। সুন্দর করে কথা বলতে গেলে একে একে অনেকগুলো চর্চার বিষয় এসে পড়ে। বিনয়ের সঙ্গে প্রথমেই বলতে হয়, ব্যক্তিত্বের শূন্যতা সুন্দর কথা বলার প্রধান প্রতিবন্ধক। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব অর্জন ব্যক্তির ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করে।
একজন কথক, উপস্থাপক, বক্তার অনুশীলন সহায়ক হতে পারে এই গ্রন্থ। একজন বাক্শিল্পীর চর্চাসাপেক্ষ কিছু বিষয় নিয়ে গ্রন্থটি গ্রন্থিত হয়েছে। সুন্দর রুচিশীল উৎসাহী কারো কাজে এ-গ্রন্থ সামান্য সহায়ক হলেও আমার শ্রম সার্থক হবে।
রবিশঙ্কর মৈত্রী
সূচিপত্র * কণ্ঠস্বর * বিনীত কথোপকথন * বক্তৃতা * কিছু শব্দের সঠিক উচ্চারণ
রবিশঙ্কর মৈত্রীর জন্ম ১৯৬৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। বাবা ঋত্বিক কুমুদরঞ্জন, মা জয়ন্তী দেবী । পৈত্রিকনিবাস ফরিদপুর জেলার মধুখালি উপজেলার নরকোণা গ্রামে। শৈশব থেকেই লেখালেখি শুরু। প্রথম কবিতা লেখা এবং সম্পাদনা দেয়াল পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ, মাসিক সন্দীপনা পত্রিকায়, এরপর জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে ছােটোগল্প প্রবন্ধ প্রকাশিত। প্রথম উপন্যাস জলগুহ, প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে, তারপর থেকে প্রতি বছরই রবিশঙ্কর মৈত্রী বই। প্রকাশিত হচ্ছে এ যাবত তাঁর পঞ্চাশটি বই প্রকাশিত। রবিশঙ্কর মৈত্রী দেশহারা হলেও এক অবিচল। জীবনযােদ্ধা তিনি মরমী ভাবের মানুষ। মরমী ভাব বিতরণের মধ্য দিয়ে শুদ্ধ সত্য সুন্দর মানুষের সম্মিলন রচনাই তার ব্রত। রবিশঙ্কর মৈত্রী আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির প্রশিক্ষক। তিনি সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা করছেন ১৯৯৩ থেকে, আবৃত্তি প্রশিক্ষণের জন্য রবিশঙ্কর মৈত্রী ঘুরেছেন বহুস্থানে বহুবার। বাংলাভাষা ও সাহিত্যের শুদ্ধ চর্চার জন্য তিনি নিরন্তর কাজ করেছেন। আবৃত্তিচর্চার ভেতর দিয়ে নতুন প্রজন্মকে মূল্যবােধসম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন রবি। তাঁর আবৃত্তি কবিতাপ্রেমীদের কাছে আদৃত। সাহিত্য সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি রবিশঙ্কর মৈত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি টেলিভিশনের জন্য শতাধিক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ফাদার মারিনাে রিগন : ভেনিস টু। সুন্দরবন প্রামাণ্যচিত্রটি দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত। রবিশঙ্কর মৈত্রী এখন ফরাসি দেশবাসী।