ব্যক্তিমানুষ সাবিত্রী রায় আমার মা সাবিত্রী রায় এ-যুগের প্রজন্মের কাছে একেবারে অপরিচিতা। ওঁর রচনার সঙ্গে যাঁরা পরিচিত, তাঁরা অনেকেই মনে করেন কথাশিল্পী হিসাবে সাবিত্রী রায়ের যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি, জীবিতকালে ওঁর প্রাপ্য মর্যাদা উনি পাননি। বাজারে ওঁর লেখা উপন্যাসগুলি প্রায় অবলুপ্ত। তাই আজ যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় উইমেন্স্ স্টাডিজের প্রচেষ্টায় ওঁর ছোট গল্পসংকলন নূতন কিছু নয় এবং রম্যরচনা নীলচিঠির ঝাঁপি একত্রিত হয়ে প্রকাশিত হতে চলেছে, সাবিত্রী রায়ের গুণমুগ্ধরা নিশ্চয়ই আনন্দিত হবেন। সবচেয়ে বড় কথা, এ-যুগের ছেলেমেয়েরা ওঁর রচনার সঙ্গে সামান্য পরিচিত হবার সুযোগ পাবে। মা ছিলেন মূলত ঔপন্যাসিক। বিস্তৃত পটভূমিতে ছড়ানো তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস, বিশেষ করে পাকা ধানের গান (তিন খণ্ড) এবং মেঘনা-পদ্মা (দুই খণ্ড)। ওঁর কাছে উপন্যাস শুধুমাত্র বড় গল্প নয়, বস্তুত, বহু কাহিনী উপকাহিনীর বিন্যাস— যার মধ্যে রয়েছে রাজনীতির প্রশ্ন ও সামাজিক জিজ্ঞাসা। প্রথম মহিলা রাজনৈতিক ঔপন্যাসিক হিসাবে ওঁকে চিহ্নিত করলে অত্যুক্তি হবে না। ওঁর প্রথম উপন্যাস সৃজন প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে ; দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের উদ্যোগপর্বে ভারতের রাজনৈতিক ঘটনার পটভূমিকায় রচিত এই উপন্যাস। ওঁর সবকটি রচনায় কয়েকটি যুগের ছবি ধরা রয়েছে— গান্ধীযুগ, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদ থেকে সাম্যবাদের বিবর্তন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মহামারী, দেশভাগ, সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন, এমন-কি বাস্তুহারাদের সমস্যা। তাছাড়া ভারতের অন্যান্য প্রান্তের মানুষের ছবি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চরিত্রগুলোতে বিশ্বমানবতাবাদের আস্বাদ সাহিত্যের বুনুনিতে মিশে গেছে।