পাগলামির কারুশিল্প বড়ো মাপের একটি খাতা, লাইনটানা ছোটো ছোটো হরফে ভরা দুশো একচল্লিশটি পৃষ্ঠা, এই নিয়ে অবনীন্দ্রনাথের ‘খুদ্দুর যাত্রা’ বা ‘খুদি রামলীলা'। পুঁথিপালা বা যাত্রার কোনো অভাব নেই তাঁর, আর সেসব পালার একটা বড়ো অংশই ভর করে থাকে রামায়ণের টুকরো কোনো কাহিনীর ওপর, ‘যাত্রাগানে রামায়ণ' নামের মুদ্রিত বই আছে একটি, প্রথমে তাই এ-খাতাটি নিয়ে উত্তেজিত হবার কারণ থাকে না তেমন। বাষট্টি থেকে বাহাত্তর বছর বয়স পর্যন্ত খ্যাপামির যে হাওয়ায় ছবির চৰ্চা দূরে সরিয়ে রেখে উদ্ভট লেখার খামখেয়াল নিয়ে মেতে ছিলেন আমাদের এই শিল্পী, তার বহু নিদর্শনের অন্যতম একটি হলো ‘খুদ্দুর যাত্রা', নাম দেখে এ-রকমই ভাবতে ইচ্ছে করে প্রথমে। কিন্তু পাতার পর পাতা উলটে যেতে যেতে ভেঙে যায় সে ভুল। কেননা, খাতাটি শুধু যে লেখায় ভরা তা নয়, লেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে আছে নানারকম ছবি, গল্পের সঙ্গে যেন তার ধারাবাহিক কোনো চিত্ররূপায়ণ। গল্পের সঙ্গে লেখকের নিজেরই আঁকা ছবি দেখতে আমরা একেবারে অনভ্যস্ত নই। ‘আবোল-তাবোল'-এর কবিতাগুলির সঙ্গে অচ্ছেদ্য হয়ে আছে সুকুমার রায়ের স্কেচগুলি, রবীন্দ্রনাথের ‘সে’-ও আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে ভাষার সঙ্গে সঙ্গে রেখায়। সে-রকমই কোনো উদাহরণ কি ধরা আছে এখানে? শিল্পী অবনীন্দ্রনাথের কাছে সেটা খুব অপ্রত্যাশিতও ছিল না। কিন্তু না, ‘খুদ্দুর যাত্রা’-র ছবি সে-অর্থে ছবি নয়। একেবারে সূচনা-পৃষ্ঠায় লেখার কাটাকুটি থেকে প্রায় রবীন্দ্রনাথেরই ধরণে একটি গণেশমূর্তি
জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২। তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন। বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ খ্রিঃ লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, এ আমির আবরণ, উর্বশীর হাসি, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। শঙ্খ ঘোষ ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে অবসর নেন। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়,শিমলাতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেকগুলো অনেকগুলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।