হারাণচন্দ্র রক্ষিত মাত্র তেইশ বছর বয়সে মাসিক কর্ণধার পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদকরূপে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। কলেজীয় বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করতে না পারলেও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি, বুদ্ধিদীপ্ত মনীষার প্রয়োগে খুব অল্প বয়সেই ঐতিহ্যপূর্ণ বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন।
সচিত্র মাসিকপত্রিকা জন্মভূমি প্রকাশের প্রথম দশবছরে প্রায় প্রতিটি সংখ্যায় হারাণচন্দ্রের কবিতা, সমালোচনা, জীবনীমূলক প্রবন্ধ, ক্ষুদ্র উপন্যাস ও ইংরেজি উপন্যাসের অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। বঙ্গবাসী পত্রিকায় সম্পাদকের অনুরোধে তিনি শেক্সপিয়রের নাটকের গল্পাংশের যে ধারাবাহিক অনুবাদ করছিলেন সেগুলির যথেষ্ট সুখ্যাতি হয় এবং তৎকালীন সরকার তাঁকে রায়সাহেব উপাধি দান করেন । বহুগ্রন্থ প্রণেতা হারাণচন্দ্র বাংলাভাষার লেখকদের পরিচয় তুলে ধরার জন্য বাঙ্গালা ভাষার লেখক শিরো নামে জন্মভূমি পত্রিকায় জীবিত লেখকদের নামসূচি প্রকাশ করতে থাকেন। যদিও এ লেখার ভূমিকায় তিনি লেখেন ‘আপাতত: জীবিত বাঙ্গালা লেখকগণকে লইয়া আমরা এই কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলাম। ইচ্ছা আছে, এই কাৰ্য্য সমাপনান্তে মৃত লেখকগণ সম্বন্ধেও আলোচনা করিব।' হারাণচন্দ্র রক্ষিত 'বাঙ্গালা ভাষার লেখক' এই পর্যায়ের কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেন নি। এরই দ্বিতীয় প্রচেষ্টার ফসল ভিক্টোরিয়া-যুগের বাঙ্গালা সাহিত্য প্রবন্ধ গ্রন্থটি। ভিক্টোরিয়া-যুগে বাঙ্গালা সাহিত্য গ্রন্থে ইতিহাস পরম্পরায় প্রবন্ধগুলির আলোচনার গতি অপূর্ব। ভিক্টোরিয়া রাজত্বে বাংলা সাহিত্যের শৈশব অবস্থা, অতীতের গর্ভে বিলীয়মান অনেক বিষয়ই হারাণচন্দ্র রক্ষিত সরস ভাষায় পাঠক সমক্ষে তুলে ধরেছেন। ১৩১৮ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত এই প্রবন্ধ গ্রন্থটির পুনর্মুদ্রণ কেন আজও অপরিহার্য পাঠক তা বুঝবেন ।