ভূমিকা রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ায় ২৮ মে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১২৭২ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সনের ‘এইট পোর্ট্রেটস্' গ্রন্থে এই জন্মতারিখ দেওয়া আছে। আভ্যন্তরীণ তথ্যপ্রমাণ হইতে বোঝা যায়, রামানন্দের নিকট হইতেই এগুলি গৃহীত’। শান্তা দেবী ও যোগেশচন্দ্র বাগল এই জন্ম-দিবসের তারিখ গ্রহণ করেছেন। রামানন্দর পিতার নাম শ্রীনাথ চট্টোপাধ্যায়, মাতা হরসুন্দরী দেবী। ১৮৮৫-তে তাঁর বিবাহ হয়, স্ত্রীর নাম মনোরমা দেবী। সংস্কৃতজ্ঞ, ব্রাহ্মণ, পণ্ডিত, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান রামানন্দ দারিদ্রের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন, সেইসঙ্গে পরিশ্রম ও নিষ্ঠাকে আয়ত্ত করেছেন। ছাত্রজীবনে রামানন্দ পরীক্ষায় সুফলের জন্য প্রাপ্ত বৃত্তির উপর নির্ভরশীল ছিলেন ; কলকাতায় পঠনকালে এই মেধাবী তরুণ সেই বৃত্তি থেকে গ্রামে স্বগৃহে আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েছেন। এই শহরের তখনকার পরিবেশ থেকে রামানন্দ মুক্তদৃষ্টি, দেশীয় সমাজ-সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, সমাজের বঞ্চিত গোষ্ঠীর প্রতি সমব্যথীর অধিকারী হয়ে উঠলেন। এক সংগ্রামী জীবন-যাপনের সুবাদে রামানন্দ অদম্য তেজস্বী স্বাধীনচেতা স্বভাব নিজেই সৃষ্টি করে নিলেন। তার দরুন সেই কালে, ১৮৮৮-তে বি.এ. পরীক্ষায় ইংরেজি অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েও কোনো সহজপ্রাপ্য সরকারি পদের উমেদার হতে পারেননি। ১৮৯০ সালে এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ স্থান পেলেন। তখন রামানন্দ বিবাহিত। নিজের নাগরিক জীবনের খরচ বাঁচিয়ে মা, স্ত্রী, ভাই-বোনের সংসার প্রতিপালনের দায়িত্ব চল্লিশ টাকার ‘রিপন বৃত্তি তে পালন করেছেন। এই ব্রাহ্মণসন্তানের কাছে তখন উপবীত ছিল অলংকার মাত্র। ১৮৮৯-তে রামানন্দ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নিয়েছেন ; সেই কালেই শিবনাথ শাস্ত্রীর অনুসরণে উপবীত বর্জন করেছেন। তার প্রভাবে রামানন্দ যেন দ্বিগুণ পরিমাণে ব্রাহ্মণত্ব ফিরে পেলেন; তেজ এবং ত্যাগ রামানন্দর স্বভাবে প্রবলভাবেই দেখা দিল।