ভূমিকা সুবর্ণগ্রামের পত্তন হিন্দু আমলে হলেও, সেই অতীতের কোন চিহ্নই বর্তমান সোনারগাঁও-এর কোথাও আর অবশিষ্ট নেই। সমগ্র সমৃদ্ধ অঞ্চলটির বিস্তৃত তথ্য আছে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সমীক্ষায়। বর্তমান ঢাকা শহরের ২৫ কি. মি. দক্ষিণপূর্বে সোনারগাঁও শহরতলী। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের দুধারেই বিস্তৃত সোনারগাঁও-এর চারদিক নদীতে ঘেরা একটা ত্রিকোণ দ্বীপের মত। উত্তর-পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র-শীতলাক্ষ্যা, পূবদিকে মেঘনা, আর দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং শীতলাক্ষ্যার মিলিত স্রোত। শীতলাক্ষ্যা এবং মেঘনার মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী খাল শহরের দক্ষিণাংশে প্রবাহিত। মোঘল আমলে যে ২৪ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছিল অবস্থান, এখনও তাই আছে। তবে বর্তমানে পরিচয় একটি থানা হিসাবেই। নদীতীরবর্তী সুবর্ণবতী বা সুবর্ণগ্রাম মূলত ছিল নদীতীরবর্তী একটি বিপণন কেন্দ্র। চোদ্দ শতকের প্রথমে দিল্লি সুলতানের প্রতিনিধি সামসুদ্দিন ফিরোজ স্বাধীনতা ঘোষণা করে সোনারগাঁও থেকে নিজস্ব মুদ্রা প্রচারের পর, স্থানটি ইতিহাসের পাতায় নিজের স্থান করে নেয়। ফকরুদ্দিন মুবারক শাহর আমলে (১৩৩৮-১৩৫৩) রাজধানী শহরের মর্যাদা লাভ করে। ক্রমশ সোনারগাঁও প্রাদেশিক শহর এবং বস্ত্রসম্ভার বিক্রয়ের আন্তর্জাতিক বন্দর হয়ে ওঠে। সোনারগাঁও ছিল ঈশা খাঁ এবং তাঁর পুত্র মুশা খাঁর রাজধানী শহর । ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চল মোঘল অধিকারে যাওয়ার সময়ে মসলিন বিক্রয়ের অন্যতম কেন্দ্ৰে পরিণত হয়েছিল। ঢাকায় মোঘল রাজধানী স্থাপনের পর সোনারগাঁও-এর দ্রুতপতন শুরু হয়ে যায়। এর অন্যতম একটি কারণ ছিল নদী রেখার পরিবর্তন। উনিশ শতকের প্রথম থেকেই সোনারগাঁও জঙ্গল সমাকীর্ণ বন্য জন্তুপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়। সেই পরিত্যক্ত জঙ্গলাবৃত অঞ্চলের সামান্য অংশে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে পানাম নগরী। যার বুক জুড়ে ছড়িয়ে আছে উপনিবেশিক সভ্যতার স্থাপত্য নিদর্শন। বেশ কিছু হিন্দু ব্যবসায়ীর ভগ্নপ্রায় চকমেলানো ঘরবাড়ি আজও বিস্ময় জাগায়।