বিশ শতকের গােড়ায় ভারতীয় রাজনীতিতে জিন্নার প্রবেশ মহামতি গােখলের হাত ধরে। গর্বের সঙ্গে নিজেকে গােখলের শিষ্য বলে অভিহিত করতে ভালবাসতেন। সদর্পে বলতেন আমি প্রথমে ভারতীয় পরে মুসলমান, মুগ্ধ গুরু তার মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিলেন হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের রাষ্ট্রদূত হওয়ার সরােজিনী। নাইড় লক্ষৌ চুক্তির (১৯১৬) পর গােখলের উক্তিরই প্রতিধ্বনি করে তাকে আখ্যা দিলেন হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রদূত। একুশ শতকের প্রথম ভাগে পাকিস্তান গণপরিষদে জিন্নার দেয়া প্রথম ভাষণ (১১ই আগস্ট, ১৯৪৭)-কে স্মরণ করে বি. জে. পি.-র তৎকালীন সভাপতি লালকৃষ্ণ আদবানি তার সম্পর্কে বললেন, তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু ইতিমধ্যে এই। উপমহাদেশে গঙ্গা-সিন্ধু দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষ ও হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের মধ্য দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলেন জিন্না তার সমাপ্তি ঘটালেন দ্বি-জাতিতত্তের মধ্য দিয়ে। একদিন। যে মুসলিম লীগের সদস্যপদ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সম্প্রদায়-ভিত্তিক। আদর্শের জন্য সেই লীগই তাঁর নেতৃত্বে শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি করল। তথাপি মুসলমানদের এক বৃহত্তর অংশ স্বাধীন ভারতকেই তাদের মাতৃভূমি বলে স্বীকার করে নিল, নতুন তৈরি পাকিস্তান নয়। বর্তমান গ্রন্থ রচিত হয়েছে জিন্নার জীবনের রাজনৈতিক স্থান পরিবর্তনের টানা-পােড়েনকে নিয়ে। ১৯৩৪ সালেও লন্ডনে পাকিস্তান পরিকল্পনার প্রবক্তা চৌধুরী রহমত আলিকে যে জিন্না উপহাস করেছিলেন অলীক কল্পনার জন্য তিনিই আবার মাত্র তেরাে বছরের মধ্যে কীভাবে ধীরে ধীরে ‘পাকিস্তান প্রস্তাবকে বাস্তবে রূপায়িত করলেন তারই এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মৌলিক গবেষণামূলক গ্রন্থরাজির উপর ভিত্তি করে।