ভূমিকা বাণী রায়ের প্রসঙ্গে সুমিতা চক্রবর্তীর একটি প্রবন্ধ ১ অবশ্য উল্লেখযোগ্য। লেখিকার বিশেষত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “তিরিশের দশক পর্যন্ত নারীর নিজের মনে স্বব্যক্তিত্বের যে উদ্ভাস – তার স্বরূপ পিতৃতন্ত্র-শাসিত সমাজের প্রত্যাশা অনুসারে নিরূপিত। অর্থাৎ, নারী প্রথাসিদ্ধ চিন্তন অনুযায়ী জননী-জায়া-কন্যার ভূমিকাতেই সেখানে স্বস্থ থাকতে চান। অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা যাতে তাঁর সেই ভূমিকার ‘গৌরব’ ও ‘মহত্ত্ব’-কে বিপর্যস্ত না করতে পারে— সেজন্য নারী সর্বদা সন্ত্রস্ত ও সচেতন। অল্পমাত্র ব্যতিক্রম দু-একটি লেখায় ফুটে উঠতে শুরু করেছে মাত্র। কিন্তু চল্লিশের দশকে নারী কোথাও কোথাও দাঁড়াবার জায়গা অধিকার করেছেন পিতৃতন্ত্রের প্রত্যাশা, নির্দেশ, অপ্রসন্নতা ও শাসন উপেক্ষা করেই। নিজের ‘চাওয়াকে’ প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের ইচ্ছা অনুসারে। সর্বত্র নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেও ময়। কোথাও কোথাও। তাঁরই শিল্প-দৃষ্টান্ত আমরা পাব বাণী রায়ের উপন্যাসে। এই কাজটি আরও কোনো কোনো মহিলার লেখায় সেই সময়ে আমরা পেয়েছি। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও বাণী রায়ের স্বাতন্ত্র্য চোখে পড়বার মতো।” নারীকে দেবী বা অতিমানবী রূপে না চিত্রিত করে রক্তমাংসে গড়া মানুষ এমন নারীকে তিনি তাঁর লেখায় তুলে ধরতে চেয়েছেন; সেখানে তার কামনা-বাসনা, ভোগ-সর্বস্বতা, রূপ- বিষয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা, স্বার্থপরতা, প্রেমের প্রাবল্য, যৌন-প্রবৃত্তি, স্খলন- পতন— এই সবের প্রাধান্যই রয়েছে। আসলে নারীর ভাবমূর্তি idol ভাঙাই তাঁর লক্ষ্য ছিল, এখানেই তাঁর প্রতিবাদ, বিদ্রোহ। অনেক সময় পাঠকের কাছে তা বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু যা সত্য তাকে উপস্থাপিত করার জন্য এই তীব্রতার প্রয়োজন ছিল। মনে হয় বাণী রায় নারীর লজ্জাশীলা রূপ আমি নারী- এই শ্রেণিভুক্ত হয়ে সচেতন থাকতেন না, পুরুষালি ভাব তাঁর ব্যক্তিত্বের বিশেষত্ব ছিল।