ভূমিকা শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে কিছু লেখেননি। কিন্তু তাঁকে নিয়ে বহু লেখা হয়েছে। আমাদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণ একটা রহস্য যেন। তিনি স্কুলে পড়েননি। কিন্তু যে কোনো পণ্ডিতের চেয়েও তিনি বেশি পণ্ডিত। তাঁর এই জ্ঞান বই পড়ে হয়নি। কিন্তু বই- পড়া জ্ঞানকেও তিনি ছাড়িয়ে গেছেন। বস্তুত জ্ঞান তো বাইরের জিনিস নয়। আমাদের ভেতরেই অনন্ত জ্ঞান-ভাণ্ডার। তার যিনি সন্ধান পান, তাঁর বই, শাস্ত্র বা পাণ্ডিত্যের দরকার হয় না। আশ্চর্যের বিষয়, বহু জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি এই নিরক্ষর মানুষটির পায়ের কাছে বসে মুগ্ধ হয়ে তাঁর অমৃত কথা শুনতেন। আমাদের সৌভাগ্য, সেইসব কথার অধিকাংশই লিপিবদ্ধ করা আছে। তাঁর অনুগামীরা যেমন করেছেন, তেমনি করেছেন সমালোচকরাও। দুয়ের মধ্যে তথ্যেরও কোনো অমিল নেই। শ্রীরাজাগোপালাচারীর লেখা 'শ্রীরামকৃষ্ণ উপনিষদ' এমনই একটি দলিল। প্রাচীন ভারতবর্ষে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় মুখে মুখে বিদ্যাদান করা হত। কোনো শাস্ত্রগ্রন্থ ছিল না। আচার্যের জীবনই ছিল ‘জীবন্ত শাস্ত্র’। এই যুগে এমনই একজন আচার্য হলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তাঁরও সব কথা মুখে-মুখে। তিনিই প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছেন। সাক্ষাৎ বেদমূর্তি তিনি। শ্রীরাজাগোপালাচারী বলেছেন, ‘কোন মহর্ষি যখন কথা বলেন, তখন শুধু তাঁর বুদ্ধি নয়, সমগ্র জীবনটাই কথা বলে। তেমনি শ্রীরামকৃষ্ণ যখন কথা বলেন, তখন ভারতবর্ষের যত মুনি ঋষি আছেন সবাই তাঁর মধ্য দিয়ে কথা বলেন। স্মরণাতীত কাল থেকে ভারতের যে সঞ্চিত জ্ঞানভাণ্ডার তারই মূর্তরূপ শ্রীরামকৃষ্ণ। তাঁকে কোনো দেশ বা কালের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না। তিনি নিত্যসত্য।