ইরাবতী ও চন্দ্রভাগার নদীর দোয়াব অঞ্চলের বাসিন্দারা ‘মদ্র' নামে অভিহিত হত। তাদের রাজা ছিলেন শল্য। এখন উনি বৃদ্ধ। বয়স ঢলের দিকে। উনি ওঁর পৌত্রীকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : “বলতে পারিস, আমার বয়স কত?” “দাদু, তোমার চেয়ে বয়সে বড় কেউ নেই”— বিশ বছরের যুবতীটি উত্তর দিল। “তবু চলা-ফেরা করতে আমার কোমর ব্যথা করে না... পিঠকুঁজো হই নি। কেন বলতে পারিস?” “তুমি খুব বলিষ্ঠ, শক্তসমর্থ, শক্তিশালী”— স্মিত হেসে, সগর্বে কন্যাটি উত্তর দিল। “এ কথা নয় রে। আমরা যে পুরোনো দিনের মানুষ” বৃদ্ধ শল্য হেসে উঠলেন। হাসির দমকে তাঁর শ্মশ্রুতে দোলা লাগল । “সব সময় তুমি ‘আমরা পুরানো লোক' বলছ কেন, তোমরা কতজন আছ?” “এর কি কোনো হিসেব আছে? আমার মতো বয়স্ক যারা তারা সকলেই এরকম।” “তোমার যত বয়স হয়েছে, তত বয়সের কেউ আর এ পুরীতে নেই । “অন্য রাজ্যের পুরীতে আছেন। পুরীর বাইরে লোক-সাধারণের মধ্যে আছেন। পুরোনো দিনের লোকেরা মানেই শক্ত-সমর্থ।” “তা কেন হবে?” “ওঁদের জীবনের ধরনটাই এরকম। তোদের মতো নয়। দেশাচার, লোকাচার ছেড়ে তোরা অন্যের অনুসরণ করিস...।” নাতনি তাঁকে থামিয়ে কথার মধ্যেই বলে, “দাদু, তুমি এত শীঘ্র কেমন করে ভুললে যে তোমার আর আমার মধ্যে শর্ত হয়েছে যে এ ব্যাপারে কোনো কথা হবে না?” “ঠিক আছে, তোর সঙ্গে না-ই বললাম। তোর বাবা ফিরুন। শুনেছি, সে জুয়া খেলতে গেছে। ওর সঙ্গেই কথা বলব। জানি না, কবে সে ফিরবে। কতবার বারণ করেছি। এবার তার পিঠে দু’ঘা চাবুক মেরে কথা বলব।” কিছুক্ষণ আগে যে দাদু হাসছিলেন, তিনি অকস্মাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন। “এতদিনে তোর বিয়ে হয়ে দু'-একটি সন্তানের মা হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। তোর কাছে তো বাবার কথাই ধ্রুব সত্য বলে মনে হয়। এজন্য এখনো পর্যন্ত আইবুড়ো রয়ে গেলি। এটা কি খুব ভালো কথা?”