ভূমিকা অতিমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নিবিড় শিল্পায়নের ফলে এদেশের শহরাঞ্চলে স্থানাভাব ঘটার দরুন মাটিতে বাগান করার সুযোগ যতই কমে আসছে ততই ইট-সিমেন্ট বাঁধানো চত্বর, উঠোন, বারান্দায় কিংবা ছাদের উপর টবে গাছ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। চন্দ্রমল্লিকা ও ডালিয়াসহ সব রকম মরশুমি ফুল টবে ভালোই হয়। এদেশে চন্দ্রমল্লিকা ও ডালিয়া প্রধানত টবে করার প্রথাই প্রচলিত আছে। অনেক গুল্ম টবে ভালোভাবেই করা যায়। আজকাল সংকরায়ণের মাধ্যমে বেঁটে প্রজাতি উদ্ভাবনের প্রবণতা বেড়েছে, ফলে টবে করার মতো অনেক প্রজাতি আগের চেয়ে সহজলভ্য হয়েছে। আর যেসব প্রজাতির বেঁটে জাতের গাছ সহজে পাওয়া যায় না তাদের ডাল ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে বেঁটে করে রাখার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাধারণ হলিহক অতি লম্বা ধরনের (দেড় থেকে 'দু’মিটার), কিন্তু ছোট অবস্থায় চারার মাথা খুঁটে গাছকে ঝোপালো করে নিলে অধিক পরিমাণে ফুল পাওয়া যায়। বহু প্রজাতির বেলায় এ-নিয়ম খাটে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে, বড় বাহারি তরু ও ফলের গাছ কীভাবে টবে করে ফুল ও ফল পাওয়া যায়! আজকাল আমরা পুষ্পপ্রদর্শনীর বনসাই বিভাগে টবে ফলধরা লেবু, পেয়ারা, আম প্রভৃতি গাছ দেখেছি; এবং তা দেখে এটা আর অসম্ভব বলা যাবে না। তা হলেও প্রশ্ন থেকে যায়, কৃষ্ণচূড়া (গুলমোহর), আমালতাস, জাকারান্ডা, জারুল, বড় কাঞ্চন প্রভৃতি গাছ টবে করে ফুল করা যাবে কি না! যখন বড় ধরনের ফলের গাছ টবে বেঁটে অবস্থায় ফল দিতে পারে তখন বড় জাতের ফুলের গাছও টবে অবশ্যই ফুল দেবে। এদেশে বনসাই-করিয়েদের মধ্যে ফল করার প্রবণতা প্রাধান্য পাওয়ার দরুন বাহারি ফুলের বনসাই অপেক্ষাকৃত কম দেখা যায়। কিন্তু এ-কাজে যে সফল হওয়া যায় তার প্রথম প্রমাণ পেয়েছিলাম Paul Lesniewicz সাহেবের Indoor Bonsai শীর্ষক বইটির রঙিন ফোটো-চিত্রের সমারোহের মধ্যে, যা অনেকাংশে বনসাই সংক্রান্ত অতীতের ধারণা পালটে দিয়েছে। আজকাল ছাদের ওপর কিচেন গার্ডেন-এ লাউ-কুমড়োর মতো ভারী ধরনের লতারও চাষ করে ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই এসব আর অসম্ভব বলে মনে করার কারণ নেই। বইটির চিত্রণের কাজে ব্যবহৃত সমস্ত রেখাচিত্র ও অধিকাংশ ফোটো নিজের হাতে করেছি। আর যেগুলি অন্যের সাহায্যে পেয়েছি তার জন্য সংশ্লিষ্টজনের কাছে আমি ঋণী। বইটি পাঠকদের ও টবের বাগান-করিয়েদের (Pot-growers) দ্বারা সমাদৃত হলে এটি তৈরির কাজে সংশ্লিষ্ট সকলের শ্রম সার্থক হবে মনে করি।
তিনি ১০ মে ১৯৩৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসুদেববেড়্যা গ্রামে। ১৯৫৬ তে বি এ পাশ। গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে এবং এনসিসি এর ইনফ্যান্ট্রি শাখায় প্রশিক্ষণ লাভ। সপ্তম বেঙ্গল ব্যাটালিয়নে অফিসার পদে যোগদান, ১৯৬৩; পরে ক্যাপটেন কমিশন লাভ, ১৯৬৯। ঝাড়গ্রাম পলিটেকনিকে এনসি সি অফিসার ও গ্রন্থাগারিকের পদ (১৯৬০-১৯৯২) থেকে অবসর গ্রহণ। ঝাড়গ্রামের সুপ্রসিদ্ধ গোলাপ নার্সারি ‘হর্কালচারাল এরিনা’র প্রতিষ্ঠাতা। মিউটেশন-ব্রিডিং পদ্ধতিতে লতানে ডালিয়ার উদ্ভাবক। দক্ষ উদ্ভিদ-প্রজননবিদ। সুগন্ধি ফুলকে বাণিজ্যিক পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহারের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক ফুলচাষ বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় একাধিক জনপ্রিয় বইয়ের লেখক।