ভূমিকা গ্রন্থ আবিষ্কার : বিশিষ্ট পুথি-বিশারদ বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ (১৮৬৫-১৯৫২) ১৩১৬ বঙ্গাব্দে বনবিষ্ণুপুরের কাছে কাঁকিন্যা গ্রামে শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশের দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের গৃহে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা পালাগনের একটি পুথির সন্ধান পান। ১৩১৮ বঙ্গাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের জন্য পুথিটি সংগৃহীত হয়। সেখান থেকেই বসন্তরঞ্জনের সম্পাদনায় ১৩২৩ বঙ্গাব্দে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' নামে উক্ত পুথিটি প্রকাশিত হয়। মুখবন্ধ লেখেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী (১৮৬৪-১৯১৯)। পুথির লিপিকাল নিয়ে আলোচনা করেন লিপিবিশারদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৮৫-১৯৩০)। গ্রন্থের মূল 'ভূমিকা' লেখেন সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ (খ্রি. ১৮৬৫-১৯৫২)। সেখানে তিনি সমস্যা, পুথি, কবি, বর্ণনীয় বিষয়, ভাষা, শব্দ ও বর্ণবিন্যাস, ব্যাকরণ, রুচি ও আধ্যাত্মিকতা, শ্রীরাধা, লৌকিক সাহিত্যে শ্রীরাধার উল্লেখ এবং কাব্যসমালোচনা শিরোনামে গ্রন্থটির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। প্রাপ্ত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন পুথির প্রথম দুটি পাতা, (১ক-খ, ২ক খ) পাওয়া যায়নি। শেষদিকেও অসমাপ্ত রয়েছে। মাঝেও কিছু কিছু পাতা মেলেনি। যে পাতাগুলি পাওয়া গেছে সেগুলি হল : ৩৮, ১০-১৫, ১৭খ-১৮, ১৯খ-৪০, ৪২-৮৮ক, ৮৯-৯৩ক, ৯৪-৯৭, ৯৮খ-১০৩, ১১২-১৪৪, ১৫২-২২৬। পুথিটি দুর্ভাজ তুলোট কাগজে, ভিতরের অংশ সাদা রেখে, বাইরের উভয় পৃষ্ঠায় লিখিত। —অর্থাৎ ২২৬ × ২ = ৪৫২ পৃষ্ঠায়, অসমাপ্ত অবস্থায় এটি পাওয়া গেছে। শেষে কয়েকটি সাদা পাতা রয়েছে। সম্ভবত লিপিকর অন্য পুথি থেকে নকল করতে করতে এটি অসম্পূর্ণ রেখেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে পুথিতে তিন হাতের লেখা রয়েছে। প্রথম হাতের লেখাই বেশি। দ্বিতীয় হাতের লেখা ১৭৬ক, ২০৪-২০৭ক, ২১২, ২১৭খ-২২২ক। তৃতীয় অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন হাতের লেখা ৬ এবং ১১৫ সংখ্যক পাতায় মিলছে। ৩-১৫ পাতা পর্যন্ত প্রতি পৃষ্ঠায় আট লাইন ; তারপর থেকে প্রতি পৃষ্ঠায় সাত লাইন হিসাবে লিখিত হয়েছে। পাতার মাঝখানে সূত্রবন্ধনীর জন্য প্রায় এক বর্গইঞ্চি ফাঁক রাখা হয়েছে। পুথির পাতার আকার ১৩" x ৩"। প্রথম ও দ্বিতীয় হাতের লেখা বেশ স্পষ্ট, সুবোধ্য। পুথির ৬খ এবং ৭৩খ পৃষ্ঠায়, উপরের দিকে অস্পষ্ট ফার্সী হরকে কিছু লিখিত রয়েছে। পুথির কোথাও কবির নাম-পরিচয়, লিপিকরের নাম-পরিচয়, বা গ্রন্থটির নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই।