ভূমিকা সাহিত্য-সন্দর্শনের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হইল। সহৃদয় সাহিত্যানুরাগী, শিক্ষাব্রতী ও ছাত্রছাত্রীগণ ইহাকে যে সাদর অভিনন্দন জ্ঞাপন করিয়াছিলেন, সেইজন্য তাঁহাদিগকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি।
এই সংস্করণে আমি গ্রন্থখানি বিশেষ সতর্কতার সহিত বহুলাংশে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত করিয়াছি এবং কতকগুলি নূতন বিষয় সংযোজিত করিয়াছি। ইহার সাহায্যে ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য পঠন-পাঠন ও আলোচনার যথেষ্ট সহায় হইবে বলিয়া আমার বিশ্বাস। বাংলা সাহিত্য বলিতে আমরা বিশেষ করিয়া ঊনবিংশ শতাব্দীর গৌরবময় যুগের সাহিত্যের কথাই স্মরণ করিতেছি। এই সাহিত্য যে সম্পূর্ণভাবে ইংরেজি গৌরবময় যুগের সাহিত্যের কথাই স্মরণ করিতেছি। এই সাহিত্য যে সম্পূর্ণভাবে ইংরেজি সাহিত্য প্রভাবিত, এই কথা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। সুতরাং বলা বাহুল্য যে, আধুনিক বাংলা সাহিত্য আলোচনায় শুধু সংস্কৃত অলঙ্কারিকগণের প্রবর্তিত রীতিপদ্ধতির কণ্ঠলগ্ন হইয়া থাকিলে চলিবে না। বাংলা সাহিত্য-বিচারের রীতিপদ্ধতি পাশ্চাত্য অলঙ্কারশাস্ত্র হইতেই অনেকটা গ্রহণ করিয়া সমালোচনাশাস্ত্র গড়িয়া তুলিতে হইবে।
স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের দৃষ্টি অনেকখানি নিজের ঘরের দিকে, আত্ম-আবিষ্কারের দিকে পড়িয়াছে। ইহা অত্যন্ত সুখের কথা। কিন্তু সাহিত্যের জগৎ দেশ বা জাতির ঐতিহ্যানুগ হইলেও শ্রেষ্ঠ সাহিত্য চিরদিনই দেশ ও কালাতীত। কাজেই আমি সর্বকালের বিদগ্ধজনসম্মত সাহিত্যিক রুচিকেই সম্মুখে রাখিয়া এই গ্রন্থ রচনা করিয়াছি। অনেক স্থলে আমি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্য-বিচারের মূলতত্ত্বগুলির সমন্বয় সাধন করিতে চেষ্টা করিয়াছি। শ্রেণীবিভাগ ও উদাহরণ সংগ্রহের ব্যাপারে আমাকে যুক্তিবাদের উপর নির্ভর করিয়াছি। শ্রেণীবিভাগ ও উদাহরণ উদাহরণ সংগ্রহের ব্যাপারে আমাকে যে সকল গ্রন্থের নাম করিতে হইয়াছে, উহাদের সকলই যে সাহিত্য-বিচারের মাপকাঠিতে উৎকৃষ্ট বা আমার নিজস্ব সাহিত্যিক মতামতের চরম পরিচালক, তাহা যেন কেহ মনে না করেন। উৎকৃষ্টতম গ্রন্থ সুলভ নয় বলিয়াই আমাকে এইরূপ করিতে হইয়াছে।
‘সাহিত্য-সঙ্কেত’- বিভাগে বাংলা সাহিত্যে অবশ্যপাঠ্য কতকগুলি গ্রন্থের নাম করিয়াছি। এইরূপ তালিকা অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিবহুল হইতে পারে। তথাপি আমি শুধু সংক্ষিপ্ত পাঠ-নির্দেশ করিয়াছি এই ভাবিয়া যে, বাংলায় এইরূপ একটি তালিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। স্থানাভাবে অনেকরে নাম উল্লেখ করিতে পারি নাই, এইজন্য আমি দুঃখিত।
সম্প্রতি বাংলাদেশে বাংলা সাহিত্যের প্রতি সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হইয়াছে। এমতাবস্থায় বাংলা সাহিত্য আরও গভীরভাবে পঠন-পাঠনের ও আলোচনার সৌন্দর্যার্থেই এই গ্রন্থখানা রচিত হইয়াছে। ইহার সাহায্যে যাহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অনার্স ও এম. এ. এবং ইংরেজির এম. এ. ক্লাসের সমালোচনাশাস্ত্রের মূল তত্ত্বগুলি হৃদয়ঙ্গম করিতে পারেন, সেইদিকে বিশেষ লক্ষ রাখিয়াছি।
এই গ্রন্থ রচনায় যাঁহাদের নিকট আমি ঋণী, তাঁহাদের মধ্যে সর্বাগ্রে ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য-সরস্বতী ও যাঁহাদের পদপ্রান্তে বসিয়া আমি যৎকিঞ্চিৎ শিক্ষালাভের সুযোগ পাইয়াছি তাঁহাদিগকে শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করি। বাংলাদেশের অসংখ্য সহৃদয় শ্রদ্ধেয় অধ্যাপকের নিকট হইতে আমি মৌখিকভাবে অথবা পত্রযোগে এই গ্রন্থখানির পরিবর্ধিত সংস্করণ বাহির করিবার জন্য অনুরুদ্ধ হইয়াছি। তাঁহাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। কিন্তু যাঁহাদের সক্রিয় সাহায্য ব্যতীত বইখানি বর্তমান আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হইত না, তন্মধ্যে বঙ্গুবর অধ্যাপক অধ্যাপক শ্রীতারাচরণ বসু, এম. এ.-র অকৃপণ সহায়তা আমার পক্ষে অবিস্মরণীয়। আমার শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক শ্রীযুক্ত জ্ঞানচন্দ্র চেীধুরী, এম. এ. পরম স্নেহাস্পদ ছাত্র অধ্যাপক শ্রীভবতোষ দত্ত, এম. এ. আমাকে নানাভঅবে সাহায্য করিয়াছেন। বাল্যবন্ধু শ্রীরামচন্দ্র বসাক গ্রন্ধখানির নামটির নকশা অঙ্কিত করিয়া দিয়াছেন। তাঁহাদের প্রত্যেকের নিকট আমি কৃতজ্ঞ।
এলিট প্রেসের স্বত্বাধিকারী অধ্যাপক শ্রীবীরেশচন্দ্র বসু ও শ্রীযুক্ত রমেশচন্দ্র বসু যত্নের সহিত বইখানি ছাপাইয়াছেন, এই জন্য তাঁহাদিগকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। কয়েকটি অপ্রীতিকর মুদ্রাকর প্রমাদ রহিয়া গিয়াছে, এইজন্য আমি লজ্জিত ও দুঃখিত।
সূচিপত্র * আর্ট * সাহিত্য * কবিতা * সাহিত্যে রসতত্ত্ব * গীতিকবিতা * বস্তুনিষ্ঠ বা তন্ময় কবিতা * নাটক * উপন্যাস * ছোটগল্প * প্রবন্ধ-সাহিত্য * সমালোচনা * গদ্যসাহিত্য * রোমান্টিসিজম ও ক্ল্যাসিসিজম * সাহিত্যে বস্তুতন্ত্র ও ভাবতন্ত্র * সাহিত্যে রসসর্বস্বতানীতি * বাণীভঙ্গি * হাস্যরস * সাহিত্যে সাবলিমিটি * সাহিত্যে মিস্টিসিজম * বাংলা কবিতার ছন্দ