হুয়ান রামোন হিমেনেথ এর কবিতা : শিকড়ের ডানা (কিছু অংশ)
হিমেনেথ মৃত্যুর দু বছর আগে হিমেনেথ নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। তখন বলেছিলেন, ওই পুরস্কার আসলে প্রাপ্য তাঁর পত্নীর, জেনোবিয়ার। জেনোবিয়া ছিলেন কবির “গৃহিণী সচিবঃ সখী মিথঃ প্রিয়শিষ্যা ললিতে কলাবিধৌ” তাঁর অনুবাদ ও রচনা দফতরের সেক্রেটারি, জেনোবিয়ার নিজের কথায়, তাঁর কবিস্বামীর পূরক অপরাংশ। কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কারণ, দক্ষিণ এস্পানিয়ার অতিনির্ধারিত আঞ্চলিকতা থেকে কবির দৃষ্টিকে তিনি প্রসার করে দিয়েছিলেন বিশ্বকাব্যসাহিত্যের উদার চতুঃসীমায়। মোগের শহরের অসুস্থ নিঃসঙ্গ বিষাদগ্রস্ত শিল্পআতুর কবি যে হয়ে উঠেছিলেন “বিশ্বজনীন আন্দালুথ’, তার পিছনে তাঁরও ভূমিকা ছিল। হিমেনেথ তাঁর অন্ত্য কাব্যচয়নিকাখানি (তৃতীয় কাব্যসংকলন বা ‘তেরথেরা আস্তোলোহিয়া পোএতিকা) উৎসর্গ করেছিলেন “আমার আত্মার জেনোবিয়াকে” এই বলে। নিষ্ঠিত নব্যবাদী হিসেবে হিমেনেথ আগেই চিরাচরিত স্বাদেশিকতাকে পরিহার করেছিলেন। ইয়োরোপীয় আন্তর্জাতিকতার অন্তর্ভুক্ত হবার প্রথম ধাপ হিসেবে তাঁর কবিতায় উঠে এসেছিল ফরাসী পার্নাশিয়ানদের কাব্যকলা, ক্রমে ক্রমে ফরাসী কবিতার সিম্বলিজম আর ফরাসী চিত্রকলার ইম্প্রেশনিজম— যে সব কবির থেকে তাঁর লেখা দীপ জ্বেলে নিতে নিরত হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন য়ুগো, সাম্যা, ভের্লেন, জীন মোরেয়াস্। মদেনিমো আন্দোলনে রুবেন দারিয়োর প্রথম সারির সহকারী হয়েছিলেন হিমেনেথ এবং আন্তোনিয়ো মাচাদো— দুই তরুণ আন্দালুশি। মাচাদো যে-কবিতাকে “চাঁদ আর মলয় বাতাস, সায়র আর পাপিয়ার সমীপে নিবেদিত যৌবন আর প্রেমের জন্য গীতল বিলাপ” বলে পরে কটাক্ষ করেছিলেন, তা কেবল হিমেনেথেরই একলার ছিল না।