পৃথিবীর বয়স ও তুষারযুগ ভূতত্ত্ববিদগণ মনে করেন যে পৃথিবীর বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বৎসর। গােড়ায় পৃথিবী ছিল উত্তপ্ত মৌলিক ভূতাত্ত্বিক স্তরে আবৃত। এই মৌলিক ভূতাত্ত্বিক স্তর স্বয়ংতেজস্ক্রিয় ধাতু ইউরেনিয়াম ও থােরিয়াম সীসাতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের হিসাব অনুযায়ীই পৃথিবীর বয়স নির্ণীত হয়েছে। পৃথিবীর বয়সের অর্ধেক পরিমাণ কাল ( ২৬০ কোটি বৎসর) ওই উত্তপ্ত মৌলিক স্তরে আবৃত ছিল। তারপর পৃথিবী ক্রমশ শীতল হতে আরম্ভ করে। পৃথিবীর স্তর শীতল হয়ে যে শিলায় রূপান্তরিত হয়, তাকে বলা হয় “আর্কিয়ান’ শিলাবিন্যাস। এই স্তরেরই বিবর্তনের কোন এক সময় ভারতের মধ্য-অঞ্চলকে আলােড়িত করে মাথা তুলে দাঁড়ায় বিন্ধ্যপর্বত। দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চলই ভারতের প্রাচীনতম অংশ। এর পরে সৃষ্ট হয় হিমালয়ের পর্বতমালা। হিমালয় ও বিন্ধ্য এই দুই পর্বতের অন্তর্বর্তী অঞ্চলে আবির্ভূত উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয় গঙ্গা নদী। এই ভাবেই সৃষ্ট হয়েছিল জল ও স্থল। প্রাণ বা জীবন বলে তখন কিছু ছিল না। প্রাণ বা জীবনের প্রথম স্ফুরণ ঘটেছিল জলে, স্থলে নয়। জলজ প্রাণীগণই পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণী। তার পরের যুগে যে-সব প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে তা এই পৃষ্ঠার নিচে দেখানাে হয়েছে। তা থেকে দেখা যাবে যে মানুষই জগতের সাম্প্রতিকতম জীব। মানুষের বয়স মাত্র পাঁচ লক্ষ বৎসর, পৃথিবীর মােট বয়সের তুলনায় সেটা কিছুই নয়।
অতুলকৃষ্ণ সুরের জন্ম ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ই আগস্ট বৃটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতার শ্যামবাজারে এক সদগোপ পরিবারে। তার চিকিৎসক পিতা সেসময়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। অতুলকৃষ্ণ অসাধারণ স্মৃতিশক্তিধর ছিলেন। কলকাতার বিদ্যাসাগর স্কুল থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ইতিহাসে তিনি ১০০ নম্বরের মধ্যে নিরানব্বই নম্বর পেয়েছিলেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং নৃতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণ পদক পান। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি জুরিখ থেকে ডি.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন অর্থনীতিতে। তার গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ ম্যান ইন ইন্ডিয়া প্রথম প্রকাশিত হয়। অতুল সুর অর্থথনীতিবিদ হলেও ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, সংখ্যাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সমীক্ষার অধিকর্তা স্যার মারশালের আহ্বানে তিনি মহেঞ্জাদড়ো যান এবং ভারতীয় সভ্যতার বহু তথ্য আবিষ্কার করেন। তিনি দশ বৎসরের বেশি সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টে ফলিত অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। কমার্সিয়াল গেজেট পত্রিকার সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের অতিথি অধ্যাপকও ছিলেন। দীর্ঘ চৌত্রিশ বৎসর অধ্যাপক সুর ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। একসময় তিনি হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার বিজনেস এডিটরের দায়িত্ব পালন করেছেন। যম ছদ্মনামে লেখা প্রবন্ধ প্রতিদিন কাগজে বের হত।