ভূমিকা ভারতবর্ষের অধিবাসিগণের মধ্যে জাতি সংমিশ্রণ সম্পর্কে যে সকল বিভিন্ন গোষ্ঠীর কথা নৃতত্ত্ববিজ্ঞানিগণ বলিয়াছেন সেই গোষ্ঠীগুলি প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগ হইতে ভারতবর্ষের অধিবাসী। ঐতিহাসিক যুগে যে সকল বিদেশী জাতি ভারতবর্ষে আসিয়াছিল তাহাদের কথা কিছু বলা হইয়াছে, কিন্তু প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগে যে সকল গোষ্ঠীকে ভারতবর্ষের অধিবাসীরূপে দেখা যায় ভারতবাসী হিসাবে তাহাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় এবং সে যুগে তাহাদের কীর্তি সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয় নাই । ‘ভাবতবর্ষের প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগের অধিবাসীর পরিচয়' গ্রন্থে কয়েকটি প্রাক্- ঐতিহাসিক যুগের গোষ্ঠী, যাহারা ভারতবর্ষের সে যুগের দুইটি কৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত তাহাদের পরিচয় দেবার চেষ্টা করা হইয়াছে। এই দুইটি কৃষ্টি—সিন্ধু কৃষ্টি ও বৈদিক কৃষ্টি। এই দুইটি কৃষ্টির সম্পর্কিত গোষ্ঠীগুলির নাম লম্বামুণ্ড মেডিটারেনীয়ান গোষ্ঠী (ডাঃ বিরজাশঙ্কর গুহের Indus type) পাশ্চাত্য গোলমুণ্ড গোষ্ঠী (আলপাইন, পামিরী-ইরানো, আর্মেনয়েড, দিনারিক প্রভৃতি বিভিন্ন নাম দেওয়া হইয়াছে) এবং লম্বামুণ্ড আর্যভাষাভাষী গোষ্ঠী (গুহ—প্রোটোনর্ডিক, রিজলে— ইন্দো-এরিয়ান, হেডন—ইন্দো-আফগান)। প্রথম দুইটি গোষ্ঠীকে সিন্ধুযুগ হইতে ভারতবর্ষের অধিবাসীরূপে দেখা যায়। নৃতত্ত্ব- বিজ্ঞানিগণের মতে মেডিটারেনীয়ান টাইপের লক্ষণ উত্তর ভারতের অধিবাসীদের মধ্যে প্রবল এবং ভারতের অবশিষ্ট অংশে উচ্চ শ্রেণিগুলির অধিবাসীদের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা যায়। পাশ্চাত্য গোলমুণ্ড টাইপকে সিন্ধুযুগ হইতে ভারতবর্ষের অধিবাসীরূপে দেখা যায়। বেলুচিস্তান, সিন্ধু, কচ্ছ, গুজরাট, দক্ষিণ মারাঠা দেশ, কন্নাদ, কুর্গ, তামিল দেশ, পূর্ব উপকূল ও বাংলাদেশে এই টাইপের লক্ষণ প্রবল । তৃতীয় গোষ্ঠী আর্য (Northern Steppefolk Vedic invaders of India') জাতির লক্ষণ, ডাঃ গুহের মতে প্রধানত উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের পাঠান ও হিন্দুকুশের উপজাতিগুলির মধ্যে দেখা যায়। এই মত সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয় নাই ৷ বৈদিক কৃষ্টির আলোচনায় ঋগ্বেদ ও জেন্দাবেস্তার সাক্ষ্য অবলম্বন করিয়া বৈদিক কৃষ্টির বাহক জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় জানিবার চেষ্টা করা হইয়াছে। এই দুইটি গ্রন্থ আর্য জাতির প্রাচীনতম দলিল বলিয়া স্বীকৃত। সিন্ধু কৃষ্টির প্রসঙ্গে প্রথমে সিন্ধু কৃষ্টির বাহকগণের গোষ্ঠী পরিচয় সম্বন্ধে বিভিন্ন অঙ্গ সম্বন্ধে প্রত্নতত্ত্ববিজ্ঞানিগণের মতের আলোচনা করা হইয়াছে। আলোচনার মধ্যে সিন্ধু ধর্ম, বৈদিক ধর্ম এবং পরবর্তী ঐতিহাসিক যুগের বিভিন্ন ভারতীয় ধর্মের মধ্যে যোগসূত্রের প্রশ্নও উঠিয়াছে। গ্রন্থের সমগ্র আলোচনার একটি সংক্ষিপ্তসার দেওয়া হইয়াছে শেষের প্রবন্ধটিতে।