রাতের মাঝ প্রহরে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া ক্লান্তিহীন যন্ত্রযান ঘুমিয়ে যাওয়া একটা স্টেশনে ওকে নামিয়ে দেয়ার জন্য ছোট্ট একটু বিরতি নেয়। বাতাসে ধোঁয়ার শ্বাস ফেলে আবার ছুটলাগায় কু ঝিক্ ঝিক শব্দ তোলে আরো কিছু নিদৃষ্ট এবং দূরতম স্টেশনের দিকে। ধাবমান ট্রেনের প্রায় মিলিয়ে যাওয়া লেজের দিকে ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে থাকে সে। ধা ধা করে ভোজবাজির মতো অদৃশ্য হয়ে গেল যন্ত্রবাহন। শুয়ে থাকা ইস্পাতের রুগ্ন লাইন দুটো মৃত সাপের আদলে নিস্পৃহ শুয়ে স্বাক্ষী দেয় যে, বিশাল শক্তিধর একটা কিছু এইমাত্র অদৃশ্য হলো। বোঝা যায় কি যায় না, এইরকম তির তির করে কাঁপছে লাইন দুটো। ওজনদার চাকার ঘর্ষণ উষ্ণ চোখের জলের মতো একটুখানি তাপও দিয়ে গেছে চিকন ও মসৃণ ধাতব পাতে। হাতে ধরে থাকা ব্যাগটা ডান কাঁধে বাচ্চা নেয়ার মতো বসিয়ে রেল লাইনের স্লিপার টপকায় সে। দাড়ি মোছের জঙ্গলে লুকানো তার ঠোঁট দুটো সরব হয়ে ওঠে: গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা, কাবেরী যমুনা অই/বহিয়া চলেছে আগের মতই কই, সে আগের মানুষ কই....। মাঝরাতের নির্ভরশীল নির্জনতায় ক্রমশঃ তার গলা স্বাধীন ও সাহসী উচ্চারণে গমগমিয়ে : তার গল ওঠে। অথচ তার ভাঙ্গাচোরা ও নড়বড়ে অবয়ব, মলিন বেশবাশে গানের বাণী নির্বাচন ও এর সঠিক উচ্চারণ একদমই মানানসই লাগছে না।