"কুরআন বোঝার মূলনীতি" বইয়ের কথা: বিংশ শতাব্দীটি তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতির দিক থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ব্যক্তি পরিবার থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে যেমন এর প্রভাব রয়েছে, ধর্মীয় জীবনও বাদ পড়েনি এর বলয় থেকে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে জ্ঞান যত সহজলভ্য হচ্ছে, সত্যিকার জ্ঞানীদের সংখ্যাও যেন তার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে। দু’ চার পৃষ্ঠার আর্টিকেলেই আমাদের জ্ঞানের মশক উপচে পড়ে চারদিক প্লাবিত করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—ইসলামী জ্ঞান কোনো গ্যাস বেলুনের মতো নয় যে, মুহূর্তের মধ্যে তা উড়তে শুরু করবে, আবার সামান্য কিছুর আঘাতে মুহূর্তেই চুপসে যাবে। দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে একটু একটু করে ঝিনুকের মধ্যে যেমন মুক্তা তৈরি হয়, কালের ব্যবধানের তা ভারী, সৌন্দর্যমণ্ডিত ও মূল্যবান হয়। ইসলামী জ্ঞানও তেমনি একজন মানুষকে মূল্যবান রত্নে পরিণত করে—তবে কেবল তাদেরই যাদের এটা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় আত্মমর্যাদাবোধ, অধ্যবসায় ও সদিচ্ছা আছে। ইতিহাসকে যদি কথা বলার ভাষা দেওয়া হতো তাহলে সে কী শব্দে আমাদের তিরস্কার করতো জানি না। কারণ, যখন একটি হাদিস সংগ্রহ করতে অনেক ক্ষেত্রে মাইলের পর মাইল সফর করতে হতো, তাও এরোপ্লেনে নয়, গাধা-খচ্চরে চড়ে—তখন ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে কম-বেশ ত্রিশ হাজার হাদিস সংগ্রহ করেছেন। ইমাম বুখারী সাত হাজার পাঁচশত হাদীস সংকলন করেছেন শুধু সহীহ বুখারীতে। প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার পূর্বে তিনি দু’ রাকা’আত সালাহও আদায় করেছেন। পাখির পালক কালিতে চুবিয়ে লেখার যুগে আমাদের পূর্বসূরীদের করা রচনাগুলো আমাদের অনেকে এক জীবনে হয়তো পড়েও শেষ করতে পারব না। বিক্ষিপ্ত দু’চারখানা বই, গোটা কয়েক প্রবন্ধ, আর কিছু ইউটিউব লেকচার শুনে যে প্রজন্ম চারদিক দাবড়ে বেড়াচ্ছে তাদেরকে বলবো: দেখুন, ইসলাম একটি জীবনব্যবস্থা, একটি শাসনব্যবস্থা, একটি সমাজব্যবস্থা—মানুষের বানানো নয়, বিশ্বজাহানের মালিকের দেওয়া। ইসলাম সম্পর্কে যদি আপনি সত্যিই জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে দয়া করে ভুলে যাবেন না—এর বিভিন্ন স্তর রয়েছে এবং প্রতিটি বিষয়েরই কিছু মূলনীতি রয়েছে, রয়েছে শাখা-প্রশাখা। এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন হলো এ পথের প্রথম পদক্ষেপ। আর যদি আপনি একজন সাধারণ মানুষও হন তবুও এ সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা আপনার থাকা একান্ত প্রয়োজন, বিশেষ করে এই ফিতনার যুগে; যখন ইসলাম থেকে মুসলিমদেরকে দূরে সরানোর জন্য ইসলামকে বিকৃত করাকেই শত্রুরা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বেছে নিয়েছে, সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ ও যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা আপনাদের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছি একখানা প্রাথমিক শাস্ত্রীয় গ্রন্থ—‘ কুরআন বোঝার মূলনীতি ’। ড. বিলাল ফিলিপসের এ ছোট্ট গ্রন্থটিকে দীনের ওপর চলতে আগ্রহীদের জন্য ‘গণমানুষের শাস্ত্রীয় গ্রন্থ’ বলা যেতে পারে। কুরআন বোঝার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শাস্ত্রীয় বিষয়গুলো তিনি এ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন একেবারেই সংক্ষিপ্ত পরিসরে।
ড. আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস-এর জন্ম জ্যামাইকার কিংস্টনে। বেড়ে উঠেছেন কানাডার টরন্টোতে। সেখানেই ১৯৭২ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। মাদীনাহ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামিক অনুষদ থেকে বিএ ডিগ্রি (১৯৭৯) অর্জন করেন। এরপর বিয়াদের 'বাদশাহ সাউদ ইউনিভার্সিটি' থেকে আকীদাহর ওপর অর্জন করেন এমএ ডিগ্রি (১৯৮৫)। ১৯৯৪ সালে 'ওয়েলস ইউনিভার্সিটি' থেকে ইসলামি ধর্মতত্ত্বের ওপর পিএইচডি করেন। তার পিএইচডি'র বিষয় ছিল "The Exorcist Tradition in Islam"। সুদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে আরবি ভাষা, দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও এগুলোর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে 'প্রেস্টন ইউনিভার্সিটি-আজমান, ইউএই', 'কাতার গেস্ট সেন্টার, দোহা, কাতার', 'নলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রিয়াদ', 'অমদুরমান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, সুদান', 'প্রেস্টন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কলেজ, চেন্নাই, ভারত', 'ইসলামিক স্টাডিজ অ্যাকাডেমি, দোহা, কাতার'। ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার সুবাদে জর্দানিয়ান পাবলিকেশন কর্তৃপক্ষ ড. বিলাল ফিলিপসকে "The 500 most Influential Muslims"-এর তালিকাতে স্থান দেয়। এ ইউনিভার্সিটিতে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো মানুষ বিনামূল্যে ডিপ্লোমা এবং টিউশন ফি মুক্ত ব্যাচেলর অব আর্টস প্রোগ্রামে পড়াশোনা করতে পারে।