সূচি * উনিশ শতকে রাশিয়া ও জার্মানিতে রাজনৈতিক ও আইনী মতবাদের বিকাশের সাধারণ চরিত্রলক্ষণ * আলেক্সান্দর র্গেৎসেন * মিখাইল বাকুনিন * নিকোলাই চের্নিশেভস্কি * রুডলফ ইয়েরিঙ্গ * ফ্রিডরিখ ভিলহেল্ম নিটশে * নামের সূচি
ভূমিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞান আকাদেমির রাষ্ট্র ও আইন ইনস্টিটিউটের গবেষক গোষ্ঠী এই যে গ্রন্থটি প্রকাশ করছেন সেটি চার খন্ডে রাজনৈতিক ও আইনী মতবাদের ইতিহাস বিষয়ক প্রকাশনার তৃতীয় খন্ড। পূর্বোক্ত যে দুই খন্ডে প্রাচীন জগৎ ও মধ্য যুগের (খন্ড ১), এবং আধুনিক কালের (১৮ শতক অবধি -খন্ড ২) রাজনৈতিক-ব্যবহারশাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ অনুসরণ করা হয়েছে, আশা করি তার সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় আছে।
গত শতকে রুশ ও জার্মাণ মনীষীরা রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ধারণার প্রবর্তন করেছেন, এবার আমরা তার বিশ্লেষণে মন দেব। এই ধারণাগুলিকে একটা গ্রন্থে আলোচনা করার যথেষ্ট কারণ আছে।
সর্বাগ্রে উল্লেখ্য যে রাশিয়া ও জার্মানি (ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স থেকে যেখানটায় পার্থক্য) উনিশ শতকে প্রবেশ করেছে বুর্জোয়া বিপ্লব প্রসূত আমূল সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে না গিয়ে। পুরনো, সামন্ততান্ত্রিক-রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাঁড়াশিতে আটক উভয় দেশের পক্ষে সেরূপ পরিবর্তন ছিল তখনো ভবিষ্যতে ব্যাপার।
রাশিয়া ও জার্মানির রাজনৈতিক-ব্যবহারশাস্ত্রীয় তত্ত্বের গতিপথে একগুচ্ছ সমাপতন ও সমান্তরালের কাণ উভয় দেশেল সামাজিক-ঐতিহাসিক বিকাশ পথের সাদৃশ্য, সেই সঙ্গে জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান প্রখর সাংস্কৃতিক যোগযোগ। মহান ফরাসি বুর্জোয়া বিপ্লবের মতো ঘটনাও প্রভাবিক করে উভয় দেশেল আত্মিক জীবনকে। এসবের ফলে উনিশ শতকের রাশিয়া ও জার্মানির রাজনৈতিক-আইনী চিন্তাকে একসঙ্গে আলোচনার যুক্তি ও ঔচিত্য থাকে।
পূর্বেও এবং বর্তশান গ্রন্থটি সংকলন প্রসঙ্গে লেখকবৃন্দ যে মৌল বিবেচনায় চালিত হয়েছেন, সেটা হল ইতিহাস ও সমকালের মধ্যে দ্বান্দ্বিক প্রভাবপাতের নীতি, যেটা রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ক মতবাদের বিকাশে একটা বৈশিষ্ট্যসূচক দিক। যথোচিত রূপে ও নীতির বৈশিষ্ট্য হৃদয়ঙ্গম করতে হলে ক্ল্যাসিকাল মতবাদগুলির ‘নতুন জীবন’ জানা চাই, ভালো করে বেবে দেখতে হবে কেন তা জরুরি, আমাদের কালে যে ভঅবাদর্শীয় সংগ্রাম চলেছে, তাতে তাদের আকর্ষণের বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে।
পূর্ববর্তী দুটি গ্রন্থের মতো এ গ্রন্থেও সংশ্লিষ্ট তত্ত্বের যেমন ‘পোট্র্রেটধর্মী, তেমনি ধারণামূলক বিবরণকে মেলানো হয়েছে। অন্য কথায়, সর্বাগ্রে আলোচিত হয়েছে তেমন সব মনীষীর রচনা যাঁরা স্বকালের কতকগুলি প্রধান সামাজিক-রাজনৈতিক প্রবণতাকে স্পষ্ট করে প্রকাশ করতে পেরেছেন, রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ক বিজ্ঞানে তাঁদের সমকালীন ও উত্তরকালীন বিকাশে যাঁরা লক্ষণীয় প্রভাব ফেলেছেন। তবে লেখকেরা এক-একজন মনীষীর চিন্তাকে সাধারণ রাজনৈতিক-আইনী ভাবধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিশ্লেষণ করেন নি, কেননা কোনো একটা ঐতিহাসিক পর্বের বিভিন্ন ভাবধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তা দেখা দেয় না। এখানে সেগুলির উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা টিপিক্যাল নিদর্শন হিসেবে, যাতে সবচেয়ে স্পষ্টাকারে প্রকাশ পেয়েছে রাজনৈতিক-ব্যবহারশাস্ত্রীয় চিন্তার ধারণামূলক ধারা, শ্রেণী সমাজের রাষ্ট্রীয় ও আইনিী জীবনের ব্যবহারিক কাজ, রাষ্ট্রবিদ্যা ও ব্যবহারশাস্ত্রের তাত্ত্বিক সমস্যা উপস্থাপক ও সমাধানের বৈশিষ্ট্যসূচক পদ্ধতি।
ননী ভৌমিক ১৯২১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।ননী ভৌমিকের বাড়ি বর্তমান বাংলাদেশের রংপুর। রংপুর শহরে স্কুলে পড়তেন। রংপুর কলেজে থেকে আই.এসসি ও পাবনা সরকারি কলেজ থেকে বি.এসসি পাস করেন। অর্থাভাবে এম.এসসি পড়তে পারেননি। পরে বীরভূম জেলার সিউড়িতে চলে আসেন। বীরভূম ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী বিপ্লবী নিত্যনারায়ন ভৌমিক তার দাদা ।ননী ভৌমিক তরুণ বয়েসেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং স্বাধীনতা পত্রিকায় সাংবাদিকের কাজ করতে শুরু করেন। ৪৬ সালের ভয়াবহ দাঙ্গার ভেতরেও নির্ভীকভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে গেছেন তিনি। পরে তেভাগা আন্দোলনের খবর জোগাড় করেছেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে যা স্বাধীনতা পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তার এই অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ছোটগল্প সংকলন 'ধানকানা'বের হয়। অরণি পত্রিকায় নিজের সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। চৈত্রদিন তার অপর গ্রন্থ। ফ্যাসিবিরোধী প্রগতি লেখক সংঘ ও ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সদস্য ছিলেন। পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন কিছুকাল। তার বিখ্যাত উপন্যাস ধুলোমাটি ধারাবাহিকভাবে পরিচয়ে বের হয়। ১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তিনি গ্রেপ্তার হন ও প্রেসিডেন্সি, বক্সা ইত্যাদি জেলে আটক থাকেন। ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি তিনি মস্কোর প্রগতি প্রকাশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অনুবাদকের কাজ নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া যান। রুশ মহিলা স্বেতলানা'কে বিয়ে করে সে দেশেই থেকে যান। বহু রুশ সাহিত্যের অসামান্য বাংলা অনুবাদ তার হাত দিয়ে বেরিয়েছে। রাজনৈতিক সাহিত্য ছাড়াও অজস্র শিশু কিশোরদের গল্প, উপন্যাস অনুবাদ করেছেন। ফিওদোর দস্তয়েভ্স্কির বঞ্চিত লাঞ্ছিত, জন রীডের দুনিয়া কাঁপানো দশদিন, ল্যেভ তল্স্তোয়ের আনা কারেনিনা ইত্যাদি ছাড়াও বাংলা- রুশ- বাংলা অভিধান, ইউক্রেনের গল্প, সোনার চাবি, উভচর মানব ইত্যাদি। তবে অনুবাদের কাজ করতে গিয়ে নিজের মৌলিক লেখার কাজ ব্যহত হয়। সোভিয়েত মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমন করে রিপোর্টাজ ধর্মী 'মরু ও মঞ্জরী' গ্রন্থটি লেখেন সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে। তার সাহিত্যকর্মের জন্যে বঙ্কিম পুরষ্কার ও ১৯৮৮ সালে বিদ্যাসাগর-স্মৃতি পুরষ্কার দেওয়া হয় তাকে। ননী ভৌমিকের শেষ জীবন অবহেলা আর আর্থিক সমস্যায় কাটে। পুত্রের মৃত্যুতে মানসিক আঘাত ও স্মৃতিভ্রংশে ভুগতেন। ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৬ সালে তিনি রাশিয়াতেই পথ দুর্ঘটনায় মারা যান।