গ্রন্থ পরিচিতি ‘দেশে বিদেশে’, ‘পথে প্রবাসে', 'রোম থেকে রমণী', ‘চলতে চলতে’, ‘অঘটন আজো ঘটে’, ‘হে পথিক’, ‘বাঙালির ইতিহাস’কে, ‘তবু মনে রেখো’। বইয়ের তীর্থক্ষেত্র কলেজ স্ট্রীট। ১৯৫০-১৯৮০ সাল, সাধক লেখক সমাগমে তাদের লেখার জৌলুসে বলা যায় ‘স্বর্ণযুগ'। ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে' বই বাজারের অঙ্গনে, ঘুরতে ঘুরতে 'বারো ঘর এক উঠোন'। 'মহাপ্রস্থানের পথে’, ‘সাহেব বিবি গোলাম'দের নিয়ে পৌঁছে যাও। “আবার আসিব ফিরে', 'কলকাতার কাছেই' তো ‘জনঅরণ্য', 'বন পলাশীর পদাবলী', মিলে ঝুলে ‘পথের পাঁচালী', ‘সাগর থেকে ফেরা', 'বালুচরে’ আছড়ে পড়া ‘জোনাকির আলোতে চিকমিক করে। ’এই বাজারে ‘হাটে বাজারে’, ‘ঝালাপালা'র এক পালা, বছরের সবেধন নীলমণি, বইমেলা, সেখানের পালের গোদা 'ফেলুদা', 'ঘনাদা', 'টেনিদা'। প্রচ্ছদশিল্পী ও চিত্রশিল্পী হিসাবে এই গ্রন্থের লেখক ওই কলেজ স্ট্রীটকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন চিনেছেন, তাঁদের লেখা বইয়ের মলাট আঁকতে গিয়ে, তাঁদের ললাট, তাও দেখেছেন। 'কত অজানারে' কত অজান্তে লেখকরা কত কিছুই না মুখ ফসকে না, বলার গল্প বলে ফেলেছেন। এই গ্রন্থের লেখক তাও শুনেছেন। সেই সব গল্পের অলংকরণ আঁকতে গিয়ে ‘নতুন তুলির টানে' নয়, কলম দিয়ে লিখে ফেলেছেন। বই তীর্থের পীঠস্থানে লেখকের যাতায়াত ছিল অবাধ । ‘উদয়ের পথে’, দেখা, চেনা, শোনা, সব নিয়ে যা কিছু সম্পদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লেখক খোঁজ খবরে খুঁজে টুকরো কথা সাজিয়ে। সেই সব কথাই তো 'পুতুল নাচের ইতিকথা', 'জলসাঘর' তা নিয়ে রূপকথা। ‘টুকরো কথা' তো ‘প্রথম প্রতিশ্রুতী’। ‘মা’ হচ্ছে বিশ্বজননী, ‘মেঘের উপর প্রাসাদ', সে তো 'হাজার চুরাশীর মা'। বই, 'গণদেবতা', 'কথামৃত’, ‘ভারত প্রেমকথা'। ‘যদুবংশ' হয়তো ধ্বংস হয়, 'পরম রমণীয়' সুসাহিত্যের এক্কেবারেই ধ্বংস নেই। সে শুধু নীল আকাশে ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে', ‘কেয়া পাতার নৌকো' চড়ে ভাসতে ভাসতে ভেসে যায়। নারীপুরুষে নেই কোন ‘দেওয়াল' শুধুই মানুষ হওয়া। মানুষ তীর্থ 'মরুতীর্থ হীংলাজ', অমানুষ মানেই 'নিশিকুটুম্ব', তাদের তীর্থ ‘লৌহকপাট', ‘প্রজাপতি'। নিয়ে আসে 'সাত পাকে বাঁধা’, ‘বন্ধন’। ‘বরযাত্রী’ শুধুই ‘খাই খাই'। এই সব ‘কেউ ভোলে কেউ না ভোলে'। 'ছদ্মবেশী' নয়, প্রতিবেশী হয়ে লেখক কলেজ স্ট্রীট দেখেছেন। ‘দৃষ্টিপাত’ দেখিয়েছে আলোকপাত। 'কিনু গোয়ালার গলি’, আছে ‘মেমসাহেব', আছে 'বিচিন্তা' তারপর 'কড়ি দিয়ে কিনলাম, সব কিছু জানলুম। এই জানা থেকেই এই গ্রন্থের লেখকের সব কিছু জানা শোনা। দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত ক'রে লেখক বহুবর্ণের স্মৃতি নিয়ে এই বইকে রঙে-রেখায় নিটোল কাহিনীচিত্র করে সুসাহিত্যকার পাঠককে দিয়েছেন 'অফুরন্ত' আনন্দরস। সাহিত্যের বিচারে প্রচ্ছদশিল্পী নিজেই ‘আসামি হাজির'। এখন শুধুই অপেক্ষা, ‘চৌরঙ্গীর হোটেল পাড়ায়।