রবীন্দ্র-নাট্য-পরিক্রম . রবীন্দ্র-নাট্যের স্বরূপ সাহিত্যের বিচিত্র অভিব্যক্তির মধ্যে নাটকের একটা বিশিষ্ট রূপে ও ধর্ম আছে। কাব্য, উপন্যাস, গল্প প্রভৃতিতে লেখক যে শিল্পরীতির অনুসরণ করেন, নাটকের শিল্পরীতি তাহা হইতে পৃথক। কাব্য কবিমনের ভাব-কল্পনা ও অনুভূতির রূপায়ণ। মহাকাব্যে চরিত্র- সৃষ্টির প্রসায় আছে বটে, কিন্তু চরিত্রকে অবলম্বন করিয়া কবির নিজস্ব ভাবাবেগ ও কল্পনাই উৎসারিত হয় এবং চরিত্রগুলি তাঁহার ভাব ও বাণীর অঙ্গরাগমণ্ডিত হইয়াই আত্মপ্রকাশ করে। গীতিকাব্য তো একান্তভাবে কবির নিজস্ব মনোভাব বা mood-এর প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসের পটভূমি অত্যন্ত বিস্তৃত এবং লেখকের স্থান ও গতির স্বাধীনতা ও সেখানে অনিয়ন্ত্রিত। আখ্যানবস্তুর ইচ্ছানুরূপ সন্নিবেশ, পাত্রপাত্রীর মনোবিশ্লেষণে লেখকের নিজের ভাষ্য, জগৎ ও জীবনের প্রতি বিশিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গীর ইঙ্গিত বা বিচার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কি দার্শনিক মতবাদের প্রচার বা সংকেত প্রভৃতি উপন্যাসের অঙ্গীভূত হইতে পারে। সমস্ত প্রকাশটাই লেখকের মনের পর্দার উপরে প্রথমে আত্মপ্রকাশ করে, তাহারই মাধ্যমে আমরা লেখক-কল্পিত রূপ দর্শন করি। আয়তন ও আঙ্গিকে পৃথক হইলেও ছোটগল্পের মূল অভিব্যক্তির ধারাও তাহাই। লেখকই এ সব ক্ষেত্রে দ্রষ্টা, বক্তা, ভাষ্যকার, দার্শনিক,—তাহারই প্রদর্শিত পথে, তাহারই নিক্ষিপ্ত আলোকরশ্মির সাহায্যে পাঠক অগ্রসর হয়