হরিদ্বার থেকে কোনো একদিন ওরা রওনা হয়েছিল-ওরা অন্তত তাই বলে। প্রয়াগ বারাণসীর পথ ধরে গঙ্গার ধারে ধারে ওরা ডেরা বেঁধেছিল। রাজা হরিশ্চন্দ্রের নাম ওরা জানে-তিনি গঙ্গাপুত্র। সে নাম স্মরণ করার সময় ওরা মাটি ছুঁয়ে প্রণাম করে। তার চেয়ে বেশি ওদের জানা নেই। এরা বলবে তখন, না জানে বাবু কাঁহাসে আয়া, লেকিন জানে, হামরা সব আছে গঙ্গা-পুত্তুর। বলবে হরিদ্বারসে কোলকত্তা-তেমন হাজার চটান খুঁজে পাবেন। চটানে হামরা ঘাটের কাঁথা কাপড়ে ডেরা বেঁধেছি। ঘাটের দুচার পয়সায় হামলোগ নসিবকে ছুঁড়েছি। চটানে পাশাপাশি কুঁড়েঘর অনেকগুলো। কুঁড়েঘরগুলোর কোনোটায় চাল আছে, বেড়া আছে, দরজা আছে। চাল-ঘাটের ছেঁড়া তোষক এবং কাঁথার, বেড়া-ফালি বাঁশের। কিছু কিছু ঘরের চাল আছে, কিছু ঘরের বেড়া নেই, দরজা নেই। শুধু মেঝের ওপর ফালি বাঁশের মাচান। মাচানের নিচে রাজ্যের হাঁড়ি-কলসি। দরজার বদলে কোনো ঘরে ছেঁড়া কাঁথা ঝুলছে। ছেঁড়া কাঁথাটাই দরজার মতো কাজ করছে। ছেঁড়া কাঁথাটা তেলচিটে নোংরা। কোথাও পোড়া-চিতার আগুনের দাগ। তবু এটাই ওদের দরজার আব্রু, মনের আব্রু, চটানের ভালোবাসার আক্র। চটানের উঠোনে শুয়োরের খোঁয়াড়, মোরগের ঘর, কুকুরের আস্তানা। ঘরে ঘরে অভাব অনটন মারধোর। আবার ভাব ভালোবাসার কথা। ঘরে ঘরে ইল্লা চিৎকার-নাচন কোঁদন। তখন আসেন ঘাটোয়ারিবাবু। তিনি সালিসি সাজেন, বিচার করেন। চটানের মা-বাপ তিনি।
জন্ম :১৯৩৪ খ্রীস্টাব্দ। ঢাকা জেলার আড়াই হাজার থানার রাইনাদি গ্রামে। দেশভাগের পর ছিন্নমূল। যাযাবরের মতোই প্রায় কেটেছে যৌবন। কখনও নাবিক রূপে সারা পৃথিবী পর্যটন, কখনও ট্রাক-ক্লিনার। পরে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা। প্রধান শিক্ষকও ছিলেন একটি স্কুলে। আবারও ঠাঁই বদল। কখনও কারখানার ম্যানেজার, কখনও প্রকাশন-সংস্থার উপদেষ্টা। শেষে সাংবাদিকতা। প্রথম গল্প মফস্বল শহরের ‘অবসর’ পত্রিকায়। ‘সমুদ্রমানুষ’ লিখে পান মানিক-স্মৃতি-পুরস্কার। পরে শিশির পুরস্কার ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস :নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, অলৌকিক জলযান, মানুষের ঘরবাড়ি, আবাদ, নগ্ন ঈশ্বর, একটি জলের রেখা।