ভূমিকা রাজনীতির মত সাংস্কৃতিক অঙ্গনও এক আলোচিত জগত। রাজনীতি এবং সংস্কৃতি এই দুই অঙ্গনের মানুষ যেমন আলোচিত তেমনি সমালোচিত। তারা যেমন নিন্দিত ধীকৃত তেমনি নন্দিত ও প্রশংসিত। সবসময় হিউমার রিউমারের শীর্ষে তাদের অবস্থান। এই দুই অঙ্গনে যারা কাজ করতে আসেন তাদের হওয়া লাগে চৌকস, দক্ষ, অভিজ্ঞ, দূরদর্শী ও পারদর্শী। রাজনীতির এমন পিচ্ছিল ও তুমুল প্রতিযোগিতার এ জায়গায় নিজের টিকে থাকা এবং নিজেকে এগিয়ে নেয়া সত্যই ভয়ানক কঠিন কাজ, তেমনি সংস্কৃতির জগতও এক সুকুমারবৃত্তি ও সৌন্দর্য চর্চার জগত। তবে রাজনীতি ও সংস্কৃতির জগতও এক সুকুমারবৃত্তি ও সৌন্দর্য চর্চার জগত। তবে রাজনীতিও সংস্কৃতির পার্থক্য এইঃ রাজনীতি পরিবর্তন আনে মানুষের বহির্জগতে, আর সংস্কৃতি পরিবর্তন আনে তাদের মনোজগতে। একজন মানুষের ভিতরকার বিশ্বাস, রুচি, সৌন্দর্যবোধ ও চিন্তা চেতনায় যে উৎকর্ষ সেটা সংস্কৃতির মাধ্যমেই সাধিত হয়। রাজনীতিতে বক্তার যে যৌক্তিক বক্তৃতা বাগ্মিতা, সংস্কৃতিতে সেটাই প্রকাশিত হয় শিল্পীর কণ্ঠস্বর ও বাঁশির মনোহারী সুরের মাধ্যমে।
রাজনীতিতে যেটা বাঁশ, সংস্কৃতিতে সেটাই বাঁশরী। বাঁশ অত্যন্ত দরকারি বলে বাঁশের ব্যবহারও অত্যধিক। কিন্তু বাঁশরী অতটা আবশ্যকীয় নয় বলে সেটা কেবল মোহনীয় সুরের প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।
একজন সাধারণ মানুষের রাজনীতিক হয়ে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেক অনেক বাধা, তেমনি সাধারণ ঘরের একজন মেয়ে বা ছেলের পক্ষে অভিনেতা অভিনেত্রী, গায়ক গায়িকা হয়ে ওঠার পথেও অনেক জঞ্জাল ঝামেলা। বেশুমার চড়াইউৎরাই, বাধা-বিঘ্ন, আলোচনা সমালোচনা, ভৎসনা বিড়ম্কবনা অপবাদ নিন্দাবাদ অতিক্রম করেই একজন মানুষকে প্রতিষ্ঠা পেতে হয়।
সংস্কতির অনেক শাখা প্রশাখা। কবিতা গান নাটক সিনেমা উপন্যাস যাত্রাপালা বাগ্মিতা, রসিকতা-চুটকি কাওয়ালী সবই সংস্কৃতির অংশ। আমরা একখানে কেবল চলচ্চিত্রে একজন সাধারণ নারীর স্থান করে নেয়ার গল্প বলেছি। তার জীবনের নানা বাঁকে যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে আমরা সেগুলোকে সৌন্দর্যপূর্ণ ভাষায় বলে যাবার চেষ্টা করেছি কতটা বলতে পেরেছি সেটা বিচারে ভার পাঠকের উপর।
আমি সিনেমার ইতিহাস লিখিনি। ইতিহাস লেখা এত সহজ না। তবে সিনেমার সাথে যুক্ত কিছু প্রিয় মানুষেল নাম ব্যবহার করেছি খুব ভালবেসে। যদি কখনো পরস্পরা সাজিয়েছি কেবলই অনুমানের উপর ভিত্তি করে। তবে ক’জন মানুষের মতামত নিয়েছি। এ বিষয়ে আমাকে অধিক সাহায্য করেছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, চ্যানেল ওয়ানের মেকআপম্যান সৈয়দ আহমেদ হোসেন, এনএসআই কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র ক্যামেরাম্যান জিডি পিন্টু, বনশ্রীর নূর হোসেন মাস্টার, আশ্রাফ উদ্দিন, দ্বীন ইসলাম ও সহকর্মী হাসনাইন আহমেদ রুবেল।
ইতালির বিখ্যাত লেখক আরবার্তো মোরাভিয়ার একটা লেখা পড়ে কয়েক বছর অগে পরিকল্পনা করেছিলাম ‘মি বাংলাদেশ’ নামে একটি কাহিনী লিখব। লেখা শেষ করতে প্রায় সাড়ে তিন বছর লেগে গেল। শেষ ঞল চলতি বছরের ১৮ জুলাই। লেখা শেষ করে বেশ হালকা অনুভব করছি। যেমনটা অনুভব করেন মা সন্তানের জ্মাদানের পর। কাহিনীর প্রধান চরিত্র নার্গিসকে ‘মিস বাংলাদেশ’ এর মুকুট পরানো মোটেই সহজ ব্যাপার ছিল না। কারণ দেড় বছর আগেও যে মেয়েটি খাবারের অভাবে উপবাস থেকেছে। খেয়া পারাপারের পয়সা ছিল না বলে কলেজে যেতে পারেনি, তাকে ধরে এনে জোর করে শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর শিরোপা পরানো মোটেই সহজ না। সব সময় একটা কথা মাথায় ছিল- দুর্বল সিনেমার মত আমার এ কাহিনী যেন কোথাও ঝুলে না যায় বা কোন এক পর্যায়ে গিয়ে আগ্রহী পাঠক আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে।
লেখাটি কম্পোজে পাঠানোর আগে দুবার আগা-গোড়া পড়েছি। স্থানে স্থানে শব্দ ও প্যারা বদল করেছি। কম্পোজের পর তিনবার পড়লাম। তারপর একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি বন্ধু শরীফ মোঃ ইয়িাহিয়াকে দিলাম অসংগতি ধরার জন্য্ তিনি ভুল ধরার বদলে উচ্চসিত প্রশংসা করলেন। তা সত্ত্বেও যদি ভুল বা অসংগতি ধরা পড়ে, সে বিষয়ে স্মানিত পাঠকের মতামত অবশ্যই বিনয়ের সাথে বিবেচনা করা হবে।
আমার এ লেকার শিরোনাম শুনেই গ্রন্থাকারে প্রকাশের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন দি স্কাই পাবলিশার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জনাব মিজানুর রহমান মিজান ভাই। শুধু আগ্রহ প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হননি, স্মানজনক সংখ্যা বসিয়ে একখানা চেকও হাতে তুলে দেন সাথে সাথে। তার ঔদার্যের জন্য ধন্যবাদ। প্রিয় আবুল ভাই অনেক দুর্বোদ্ধ লেখার পাঠোদ্ধার করে কম্পোজ করেছেন এবং হাসিমুখে বার বার সংশোধনের মনোনিবেশ করেছেন, এজন্য তাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি মূলত ‘মিস বাংলাদেশ’ কাহিনীর মধ্যদিয়ে চিরন্তন বাংলার নারীর সংগ্রাম ও সাধনাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পরাধীন যুগে নারী বিপ্লবী হতো। সেই বিপ্লবী হওয়ার পথেও ছিল বেশুমার অন্তরায়। স্বাধীন দেশে বিপ্লবী হওয়ার সুযোগ নেই। এখন সাধনা ও অধ্যবসায়ের দিন। নিজকে গড়ার দিন এগিয়ে যাবার দিন। এখন যে কেউ অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যে কোন পর্যায়ে উপনীত করতে পারে। স্বাধীন দেশে নারী যেমন বড় রাজনীতিক হতে পারেন, তেমনি পারেন বড় শিল্পপতি বা কবি হতে। সারা বানুর স্বপ্ন ছিল সে বড় হবে। সে ক্ষুদ্র গুণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থেকে তার মূল্যবান জীবনকে নিশেষ করে দিবে না। সে ঝুঁকি নিল। জীবনের শুরুতে সে প্রতারণার শিকার হলেও প্রতিটি স্তরে সে চেয়েছে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে। কিন্তু তার জীবনে যখনই কোন অঘটন ঘটেছে, সে থেমে যায় নি। অঘটনের পাট চুকিয়ে সে নতুন জায়গায় গিয়ে নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। অনেক পথ পরিক্রমা শেষ করে অবশেষে চলচ্চিত্রে এসে সে স্থায়ী হয়। তার সংগ্রাম সাধনা ও সততা- নিষ্ঠার ফলে মেয়ে নার্গিসের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হয়। এক জনমে মানুষ রাজা হয় না ঠিক, হবে সে নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা করে রেখে যেতে পারে- আমরা এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি কাহিনীর প্রতিটি ছত্রে ছত্রে। আশাকরি পাঠকের ভাল লাগবে।
কালাম ফয়েজী পিতা ঃ আলহাজ্ব আরশাদ মিয়া মাতা : আলহাজ্ব বিবি আতর জান জন্ম ঃ বাংলা ১৩৭৬ সালে ২ পৌষ লালমােহন উপজেলার বালুরচর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। শিক্ষাজীবন ঃ ১৯৮৫ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৮৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লােক প্রশাসন বিভাগ থেকে সম্মান (১৯৯১) এবং মাস্টার ডিগ্রি (১৯৯২) লাভ করেন। কর্মজীবন ও কর্মজীবনের শুরুতে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমীর একটি প্রকল্পে নিয়ােজিত হন। ১৯৯৯ সালে এন.আই.এল.জি.-এর জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা পদে ও ২০০৫ সালে চ্যানেল ওয়ানে যােগ দেন। বর্তমানে তিনি চ্যানেল ওয়ানে স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং সাপ্তাহিক দ্বীপকথা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। সংগঠন ও তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লায়ন কালাম। ফয়েজী লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল-এর সদস্য এবং লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ওয়েসিস-এর পরিচালক ও বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য। তিনি প্রজন্ম একাডেমীর সভাপতি ও বর্তমানে লাল মােহন ফাউন্ডেশন ঢাকা’র সভাপতির দায়িত্বে আছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ ও নেতা ও কবি, পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ, ষােড়শী, বাগদত্তা, তুমি আসবে বলে, তােমার জন্য ভালােবাসা, লালআপেল, রাত্রি শেষের যাত্রী, ভালবাসি তােমাকে, অবিনাশী ছায়াপথ, রূপবতী, বরযাত্রী এবং ভােলা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। স্থায়ী ঠিকানা ও গ্রাম ও বালুরচর উপজেলা ও লালমােহন, জেলা ও ভােলা।